পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○> ミ রবীন্দ্র-রচনাবলী কর্তব্যবুদ্ধি তাহাকে যাহা বলিল তিনি তাহাই করিতে আরম্ভ করিলেন। তিনি একটা প্রিন্সিপৃল ধরিয়া চলিতে লাগিলেন। * ঘর হইতে যাহা বাহির হইয়াছিল, আবার তাহা অল্পে অল্পে ঘরে ফিরিতে লাগিল । পিতার অতি অল্প দানই তিনি বাহাল রাখিলেন, এবং যাহা রাখিলেন তাহাও যাহাতে চিরস্থায়ী দানের স্বরূপে গণ্য না হয় এমন উপায় করিলেন। কৃষ্ণগোপাল কাশীতে থাকিয়া পত্ৰযোগে প্রজাদিগের ক্ৰন্দন শুনিতে পাইলেন—এমন কি, কেহ কেহ তাহার নিকটে গিয়াও কাদিয়া পড়িল। কৃষ্ণগোপাল বিপিনবিহারীকে পত্র লিখিলেন যে, কাজটা গৰ্হিত হইতেছে । বিপিনবিহারী উত্তরে লিখিলেন যে, পূর্বে যেমন দান করা যাইত তেমনি পাওন নানাপ্রকারের ছিল। তখন জমিদার এবং প্রজা উভয় পক্ষের মধ্যেই দানপ্রতিদান ছিল। সম্প্রতি নূতন নূতন আইন হইয়া ন্যায্য খাজনা ছাড়া অন্ত পাচরকম পাওনা একেবারে বন্ধ হইয়াছে এবং কেবলমাত্র খাজনা আদায় করা ছাড়া জমিদারের অন্যান্য গৌরবজনক অধিকারও উঠিয়া গিয়াছে—অতএব এখনকার দিনে যদি আমি আমার ন্তাষ্য পাওনার দিকে কঠিন দৃষ্টি না রাখি তবে আর থাকে কী। এখন প্রজাও আমাকে অতিরিক্ত কিছু দিবে না আমিও তাহাকে অতিরিক্ত কিছু দিব না—এখন আমাদের মধ্যে কেবলমাত্র দেনাপাওনার সম্পর্ক। দানখয়রাত করিতে গেলে ফতুর হইতে হইবে, বিষয় রক্ষা এবং কুলসন্ত্রম রক্ষা করা দুরূহ হইয়া পড়িবে | কৃষ্ণগোপাল সময়ের এতাধিক পরিবর্তনে অত্যন্ত চিস্তিত হইয়া উঠিতেন এবং ভাবিতেন এখনকার ছেলেরা এখনকার কালের উপযোগী কাজ করিতেছে আমাদের সেকালের নিয়ম এখন খাটিবে না । আমি দূরে বসিয়া ইহাতে হস্তক্ষেপ করিতে গেলে তাহারা বলিবে, তবে তোমার বিষয় তুমি ফিরিয়া লও, আমরা ইহা রাখিতে পারিব না। কাজ কী বাপু, এ কয়েকটা দিন কোনোমতে হরিনাম করিয়া কাটাইয়া দিতে পারিলে বাচি । দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ এই ভাবে কাজ চলিতে লাগিল । অনেক মকদ্দমা মামলা হাঙ্গামা ফেসাদ করিয়া বিপিনবিহারী সমস্তই প্রায় একপ্রকার মনের মতো গুছাইয়া লইলেন । অনেক প্রজাই ভয়ক্রমে বস্ততা স্বীকার করিল, কেবল মির্জা বিবির পুত্র অছিমদি বিশ্বাস কিছুতেই বাগ মানিল না । • * বিপিনবিহারীর আক্রোশও তাহার উপরে সব চেয়ে বেশি। ব্রাহ্মণের ব্ৰক্ষত্রর