পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় f पूँ &२e ষে বিদেশী। তারা এখন বলে, এ সমস্তই জুয়ো ; বস্তুতন্ত্র যদি কিছু ৰাকে তো সে ওই কবিকঙ্কণ চণ্ডী, কেননা এ আমাদের খাটি মাল। তাদের কথাই যদি সত্য হয় তাহলে এ কথা বলতেই হবে নিছক খাটি বস্তুতন্ত্রকে মাচুব পছন্দ করে না ; মানুষ তাকেই চায় যা বস্ত হয়ে বাস্ত গেড়ে বসে না, বা তার প্রাণেৰ সঙ্গে সঙ্গে চলে, বা তাকে মুক্তির স্বাদ দেয় । বিদেশের সোনার কাঠি যে জিনিসকে মুক্তি দিয়েছে সে তো বিদেশী নয়—সে ষে আমাদের আপন প্রাণ। তার ফল হয়েছে এই ষে, যে বাংলাভাষাকে ও সাহিত্যকে একদিন আধুনিকের দল ছতে চাইত না এখন তাকে নিয়ে সকলেই ব্যবহার করছে ও গৌরব করছে। অথচ যদি ঠাহর করে দেখি তবে দেখতে পাব গন্তে পন্তে সকল জায়গাতেই সাহিত্যের চালচলন সাবেক কালের সঙ্গে সম্পূর্ণ বদলে গেছে। ধারা তাকে জাতিচু্যত বলে নিন্দ করেন ব্যবহার করবার বেলা তাকে তারা বর্জন করতে পারেন না। সমুদ্রপারের রাজপুত্র এসে মাহুষের মনকে সোনার কাঠি ছুইয়ে জাগিয়ে দেয় এটা তার ইতিহাসে চিরদিন ঘটে আসছে। আপনার পূর্ণ শক্তি পাবার জন্তে বৈষম্যের আঘাতের অপেক্ষ তাকে করতেই হয় । কোনো সভ্যতাই এক আপনাকে আপনি স্বষ্টি করেনি। গ্রীসের সভ্যতার গোড়ায় অন্ত সভ্যতা ছিল এবং গ্রীস বরাবর ইজিপ্ট ও এশিয়া থেকে ধাক্কা খেয়ে এসেছে। ভারতবর্ষে দ্রাবিড় মনের সঙ্গে আর্য সংঘাত ও ও সন্মিলন ভারতসভ্যতা স্বাক্টর মূল উপকরণ, তার উপরে গ্রীস রোম পারস্ত তাকে কেবলই নাড়া দিয়েছে। যুরোপীয় সভ্যতায় যে সব যুগকে পুনর্জন্মের যুগ বলে সে সমস্তই অন্ত দেশ ও অন্ত কালের সংঘাতের যুগ । মাছুষের মন বাহির হতে নাড়া পেলে তবে আপনার অন্তরকে সত্যভাবে লাভ করে এবং তার পরিচয় পাওয়া যায় যখন দেখি সে আপনার বাহিরের জীর্ণ বেড়াগুলোকে ভেঙে আপনার অধিকার বিস্তার করছে। এই অধিকার বিস্তারকে একদল লোক দোষ দেয়, বলে ওতে আমরা নিজেকে হারালুম— তারা জানে না নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া নিজেকে হারিয়ে যাওয়া নয় - কারণ বৃদ্ধি মাত্রই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া । يرته সম্প্রতি আমাদের দেশে চিত্রকলার ষে নবজীবন লাভের লক্ষণ দেখছি তার মূলেও সেই সাগরপারের রাজপুত্রের সোনার কাঠি আছে। কাঠ ছোওয়ার প্রথম অবস্থায় ঘুমের ঘোরটা যখন সম্পূর্ণ কাটে না, তখন আমরা নিজের শক্তি পুরোপুরি অনুভব কৱিনে, তখন অমুকরণটাই বড়ো হয়ে ওঠে, কিন্তু ঘোর কেটে গেলেই আমরা নিজের জোরে চলতে পারি। সেই নিজের জোরে চলার একটা লক্ষণ এই ষে তখন আমরা পরের পথেও নিজের শক্তিতে চলতে পারি। পথ নানা ; অভিপ্রায়টি আমার, শক্তিটি আমার।