পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী وان o (كا রাজলক্ষ্মীর পৈতৃক বাটীতে দুই-একটি অতিবৃদ্ধ বিধবা বাচিয়া ছিলেন মাত্র । চারিদিকে ঘন জঙ্গল ও বাশবন, পুষ্করিণীর জল সবুজবর্ণ, দিনে-দুপুরে শেয়ালের ডাকে রাজলক্ষ্মীর চিত্ত উদভ্ৰান্ত হইয়া উঠে। বিহারী কহিল, “মা, জন্মভূমি বটে, কিন্তু ‘স্বর্গাদপি গরীয়সী’ কোনোমতেই বলিতে পারি না । কলিকাতায় চলো। এখানে তোমাকে পরিত্যাগ করিয়া গেলে আমার অধৰ্ম হইবে।” রাজলক্ষ্মীরও প্রাণ হাপাইয়া উঠিয়াছিল, এমন সময় বিনোদিনী আসিয়া তাহাকে श्रांeवंग्न निल ७व६ व्यां७वंम्न कब्रिल । বিনোদিনীর পরিচয় প্রথমেই দেওয়া হইয়াছে। এক সময়ে মহেন্দ্র এবং তদভাবে বিহারীর সহিত তাহার বিবাহের প্রস্তাব হইয়াছিল। বিধিনির্বন্ধে যাহার সহিত তাহার শুভবিবাহ হয়, সে লোকটির সমস্ত অস্তরিক্রিয়ের মধ্যে প্লীহাই ছিল সর্বাপেক্ষা প্রবল। সেই প্লীহার অতিভারেই সে দীর্ঘকাল জীবনধারণ করিতে পারিল না। তাহার মৃত্যুর পর হইতে বিনোদিনী, জঙ্গলের মধ্যে একটিমাত্র উদ্যানলতার মতো, নিরানন্দ পল্লীর মধ্যে মুহমান ভাবে জীবনযাপন করিতেছিল। অদ্য সেই অনাথ আসিয়া তাহার রাজলক্ষ্মী-পিসশাশঠাকরুনকে ভক্তিভরে প্রণাম করিল এবং র্তাহার সেবায় আত্মসমপণ করিয়া দিল । সেবা ইহাকেই বলে ! মুহূর্তের জন্য আলস্ত নাই । কেমন পরিপাটি কাজ, কেমন সুন্দর রান্না, কেমন স্বমিষ্ট কথাবার্তা । রাজলক্ষ্মী বলেন, “বেলা হইল মা, তুমি দুটি থাও গে যাও।” সে কি শোনে ? পাখা করিয়া পিসিমাকে ঘুম না পাড়াইয়া সে উঠে না । রাজলক্ষ্মী বলেন, “এমন করিলে যে তোমার অস্থখ করিবে, মা ।” বিনোদিনী নিজের প্রতি নিরতিশয় তাচ্ছিল্য প্রকাশ করিয়া বলে, “আমাদের দুঃখের শরীরে অমুখ করে না, পিসিমা । আহা, কত দিন পরে জন্মভূমিতে আসিয়াছ, এখানে কী আছে, কী দিয়া তোমাকে আদর করিব।” বিহারী দুই দিনে পাড়ার কর্তা হইয়া উঠিল । কেহ তাহার কাছে রোগের ঔষধ কেহ বা মোকদ্দমার পরামর্শ লইতে আসে, কেহ বা নিজের ছেলেকে বড়ো আপিসে কাজ জুটাইয়া দিবার জন্য তাহাকে ধরে, কেহ বা তাহার কাছে দরখাস্ত লিখাইয়া লয়। বৃদ্ধদের তাসপাশার বৈঠক হইতে বাগদিদের তাড়িপানসভা পর্যন্ত সর্বত্র সে তাহার সকৌতুক কৌতুহল এবং স্বাভাবিক হৃষ্ঠতা লইয়া যাতায়াত করিত— কেহ তাহাকে দূর মনে করিত না, অথচ সকলেই তাহাকে সম্মান করিত।