পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లీ అని রবীন্দ্র-রচনাবলী হস্তক্ষেপ করিবেন, তাহাতেই মহেন্দ্রের সাংসারিক বিপ্লব আরো দ্বিগুণ বাড়িয়া উঠিবে ইহাই যখন নিশ্চয় বুঝিলেন, তখনই তিনি সংসার ত্যাগ করিলেন। রুগ্ন শিশু যখন জল চাহিয়া কঁাদে, এবং জল দেওয়া যখন কবিরাজের নিতান্ত নিষেধ, তখন পীড়িতচিত্তে মা যেমন অন্ত ঘরে চলিয়া যান, অন্নপূর্ণ তেমনি করিয়া নিজেকে প্রবাসে লইয়া গেছেন। দূর তীর্থবাসে থাকিয়া ধর্মকর্মের নিয়মিত অনুষ্ঠানে এ-কয়দিন সংসার অনেকটা ভুলিয়াছিলেন, মহেন্দ্র আবার কি সেই সকল বিরোধের কথা তুলিয়া তাহার প্রচ্ছন্ন ক্ষতে আঘাত করিতে আসিয়াছে । - কিন্তু মহেন্দ্র আশাকে লইয়া তাহার মার সম্বন্ধে কোনো নালিশের কথা তুলিল না। তখন অন্নপূর্ণার আশঙ্কা অন্য পথে গেল । যে-মহেন্দ্র আশাকে ছাড়িয়া কলেজে যাইতে পারিত না, সে আজ কাকার খোজ লইতে কাশী আসে কেন । তবে কি আশার প্রতি মহেন্দ্রের টান ক্রমে ঢিলা হইয়া আসিতেছে । মহেন্দ্রকে তিনি কিছু আশঙ্কার সহিত জিজ্ঞাসা করিলেন, “স্থা রে মহিন, আমার মাথা খা, ঠিক করিয়া বল দেখি, চুনি কেমন আছে।” মহেন্দ্ৰ কহিল, “সে তো বেশ ভালো আছে কাকীমা ।” “আজকাল সে কী করে, মহিন । তোরা কি এখনো তেমনি ছেলেমান্তষ আছিস, না কাজকর্মে ঘরকল্পায় মন দিয়াছিস ।” মহেন্দ্ৰ কহিল, "ছেলেমাহুষি একেবারেই বন্ধ । সকল ঝঞ্জাটের মূল সেই চারুপাঠখানা যে কোথায় অদৃশু হইয়াছে, তাহার আর সন্ধান পাইবার জো নাই । তুমি থাকিলে দেখিয়া খুশি হইতে—লেখাপড়া শেখায় অবহেলা করা স্ত্রীলোকের পক্ষে যতদূর কর্তব্য, চুনি তাহা একান্ত মনে পালন করিতেছে।” "মহিন, বিহারী কী করিতেছে।” মহেন্দ্র কহিল, “নিজের কাজ ছাড়া আর-সমস্তই করিতেছে । নায়েব-গোমস্তায় তাহার বিষয়সম্পত্তি দেখে ; কী চক্ষে দেখে, তাহা ঠিক বলিতে পারি না । বিহারীর চিরকাল ওই দশা । তাহার নিজের কাজ পরে দেখে, পরের কাজ সে নিজে দেখে ।” অন্নপূর্ণ কহিলেন, “সে কি বিবাহ করিবে না, মহিন।” মহেন্দ্র একটুখানি হাসিয়া কহিল, “কই, কিছুমাত্র উদযোগ তো দেখি না।” শুনিয়া অন্নপূর্ণ হৃদয়ের গোপন স্থানে একটা আঘাত পাইলেন । তিনি নিশ্চয় বুঝিতে পারিয়াছিলেন, তাহার বোনঝিকে দেখিয়া, একবার বিহারী আগ্রহের সহিত বিবাহ করিতে উদ্যত হইয়াছিল, তাহার সেই উন্মুখ আগ্রহ অন্যায় করিয়া অকস্মাৎ দলিত হইয়াছে। বিহারী বলিয়াছিল, “কাকীমা, আমাকে আর বিবাহ করিতে