পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী "לטא9\ উপর হইতে মন সরাইয়া লইতে চেষ্টা করিবে— তাহাতেই বা ক্ষতি কী । ঝড়ের সময় নৌকার শিকল যেমন নোঙরকে টানিয়া ধরে, মহেন্দ্র তেমনি ব্যাকুলতার সঙ্গে আশাকে যেন অতিরিক্ত জোর করিয়া ধরিল । রাত্রে মহেন্দ্র আশার মুখ বক্ষের কাছে ধরিয়া জিজ্ঞাসা করিল, "চুনি, তুমি আমাকে কতখানি ভালোবাস ঠিক করিয়া বলে ।” আশা ভাবিল, “এ কেমন প্রশ্ন । বিহারীকে লইয়া অত্যন্ত লজ্জাজনক যে-কথাটা উঠিয়াছে, তাহাতেই কি তাহার উপরে সংশয়ের ছায়া পড়িয়াছে।” সে লজ্জায় মরিয়া গিয়া কহিল, “ছি ছি, আজ তুমি এমন প্রশ্ন কেন করিলে। তোমার দুটি পায়ে পড়ি, আমাকে খুলিয়া বলো— আমার ভালোবাসায় তুমি কবে কোথায় কী অভাব দেখিয়াছ ।” 曹 মহেন্দ্র আশাকে পীড়ন করিয়া তাহার মাধুর্য বাহির করিবার জন্য কহিল, “তবে তুমি কাশী যাইতে চাহিতেছ কেন ।” আশা কহিল, “আমি কাশী যাইতে চাই না, আমি কোথাও যাইব না।” মহেন্দ্র । তখন তো চাহিয়াছিলে । আশা অত্যন্ত পীড়িত হইয়া কহিল, “তুমি তো জান, কেন চাহিয়াছিলাম।” মহেন্দ্র । আমাকে ছাড়িয়া তোমার মাসির কাছে বোধ হয় বেশ সুখে থাকিতে । আশা কহিল, “কখনো না । আমি সুখের জন্য যাইতে চাহি নাই ।” মহেন্দ্ৰ কহিল, “আমি সত্য বলিতেছি চুনি, তুমি আর কাহাকেও বিবাহ করিলে ঢের বেশি মুখী হইতে পারিতে।” শুনিয়া আশা চকিতের মধ্যে মহেন্দ্রের বক্ষ হইতে সরিয়া গিয়া, বালিশে মুখ ঢাকিয়া, কাঠের মতো আড়ষ্ট হইয়া রহিল— মুহূর্তপরেই তাহার কান্না আর চাপা রহিল মা। মহেন্দ্র তাহাকে সাত্বনা দিবার জন্য বক্ষে তুলিয়া লইবার চেষ্টা করিল, আশা বালিশ ছাড়িল না। পতিব্রতার এই অভিমানে মহেন্দ্র মুখে গর্বে ধিক্কারে ক্ষুদ্ধ হইতে লাগিল । যে-সব কথা ভিতরে-ভিতরে আভাসে ছিল, সেইগুলা হঠাৎ স্পষ্ট কথায় পরিস্ফুট হইয়া সকলেরই মনে একটা গোলমাল বাধাইয়া দিল । বিনোদিনী মনে মনে ভাবিতে লাগিল— অমন স্পষ্ট অভিযোগের বিরুদ্ধে বিহারী কেন কোনো প্রতিবাদ করিল না। যদি সে মিথ্যা প্রতিবাদও করিত, তাহা হইলেও যেন বিনোদিনী একটু খুশি হইত। বেশ হইয়াছে, মহেন্দ্র বিহারীকে যে-আঘাত করিয়াছে, তাহা তাহার প্রাপ্যই । ছিল। বিহারীর মতো অমন মহৎ লোক কেন আশাকে ভালোবালিৰে । এই