পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

එv-8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আশা কহিল, “বিহারী-ঠাকুরপো এখানেও আসিয়াছেন।” বলিয়া সে পাশের ঘরে গিয়া দ্বার রোধ করিল। বিহারী নিচে হইতে সকল কথাই শুনিতে পাইল । সে তখনই ছুটিয়া যাইতে উদ্যত— কিন্তু অন্নপূর্ণ পূজাহিক ফেলিয়া যখন নামিয়া আসিলেন, তখন দেখিলেন, বিহারী স্বারের কাছে মাটিতে বসিয়া পড়িয়াছে, তাহার শরীর হইতে সমস্ত শক্তি চলিয়া গেছে । . অন্নপূর্ণ আলো আনেন নাই । অন্ধকারে তিনি বিহারীর মুখের ভাব দেখিতে পাইলেন না, বিহারীও তাহাকে দেখিতে পাইল না । অন্নপূর্ণ কহিলেন, “বেহারী।” হয়, সেই চিরদিনের স্নেহনুধাসিক্ত কণ্ঠস্বর কোথায় । এ কষ্ঠের মধ্যে ষে কঠিন বিচারের বজধ্বনি প্রচ্ছন্ন হইয়া আছে। জননী অন্নপূর্ণ, সংহার-খড়গ তুলিলে কণর পরে । ভাগ্যহীন বিহারী যে আজ অন্ধকারে তোমার মঙ্গলচরণাশ্রয়ে মাথা রাথিতে আসিয়াছিল। বিহারীর অবশ শরীর আপাদমস্তক বিদ্যুতের আঘাতে চকিত হইয়া উঠিল— কহিল, “কাকীমা, আর নয়, আর একটি কথাও বলিয়ো না । আমি চলিলাম।” বলিয়া বিহারী ভূমিতে মাথা রাখিয়া প্রণাম করিল, অন্নপূর্ণার পা-ও স্পর্শ করিল না । জননী যেমন গঙ্গাসাগরে সস্তান বিসর্জন করে, অন্নপূর্ণ তেমনি করিয়া বিহারীকে সেই রাত্রের অন্ধকারে নীরবে বিসর্জন করিলেন, একবার ফিরিয়া ডাকিলেন না। গাড়ি বিহারীকে লইয়া দেখিতে দেখিতে অদৃপ্ত হইয়া গেল । সেই রাত্রেই আশা মহেন্দ্রকে চিঠি লিখিল, “বিহারী-ঠাকুরপো হঠাৎ আজ সন্ধ্যাবেলায় এখানে আসিয়াছিলেন। জেঠামশায়রা কবে কলিকাতায় ফিরিবেন, ঠিক নাই— তুমি শীঘ্ৰ আসিয়া আমাকে এখান হইতে লইয়া যাও।” ২৭ সেদিন রাত্ৰিজাগরণ ও প্রবল আবেগের পরে সকালবেলায় মহেন্দ্রের শরীর মনে একটা অবসাদ উপস্থিত হইয়াছিল। তখন ফাঙ্কনের মাঝামাঝি, গরম পড়িতে আরম্ভ করিয়াছে। মহেন্দ্র অন্তদিন সকালে তাহার শয়নগৃহের কোণে টেবিলে বই লইয়া বসিত। আজ নিচের বিছানায় তাকিয়ায় হেলান দিয়া পড়িল । বেলা হইয়া যায়, স্নানে গেল না। রাস্ত দিয়া ফেরিওয়ালা হাকিয়া যাইতেছে। পথে আপিসের গাড়ির শব্দের বিরাম নাই। প্রতিবেশীর নূতন বাড়ি তৈরি হইতেছে, মিস্ত্রি-কন্যারা