পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি ছুঃখ-বাঞ্চাটে সেই তাপসীকে আহবান করিয়া আনিবে না, এতদিন ইহাই তাহার প্রতিজ্ঞা ছিল । কিন্তু আজ সে আর কোথাও কোনো উপায় দেখিতে পাইল না— আজ তাহার চতুর্দিকে ঘনায়িত নিবিড় দুঃখের মধ্যে আর রন্ধ মাত্র ছিল না। তাই আজ সে ঘরের মধ্যে আলো জালিয়া কোলের উপর একখানা খাতায় চিঠির কাগজ রাখিয়া ঘনঘন চোখের জল মুছিতে মুছিতে চিঠি লিখিতে লাগিল— শ্ৰীচরণকমলেষু— মাসিম, তুমি ছাড়া আজ আমার আর কেহ নাই ; একবার আসিয়া তোমার কোলের মধ্যে এই দুঃখিনীকে টানিয়া লও— নহিলে আমি কেমন করিয়া বাচিব । আর কী লিখিব, জানি না । তোমার চরণে আমার শতসহস্রকোটি প্রণাম । isa তোমার স্নেহের চুনি । 8\ყ. অন্নপূর্ণ কাশী হইতে ফিরিয়া আসিয়া অতি ধীরে ধীরে রাজলক্ষ্মীর ঘরে প্রবেশ করিয়া প্রণামপূর্বক তাহার পায়ের ধুলা মাথায় তুলিয়া লইলেন। মাঝখানের বিরোধবিচ্ছেদ সত্ত্বেও অন্নপূর্ণাকে দেখিয়া রাজলক্ষ্মী যেন হারানো ধন ফিরিয়া পাইলেন । ভিতরে ভিতরে তিনি যে নিজের অলক্ষ্যে অগোচরে অন্নপূর্ণাকে চাহিতেছিলেন, অন্নপূর্ণাকে পাইয়া তাহা বুঝিতে পারিলেন। তাহার এতদিনের অনেক প্রাত্তি অনেক ক্ষোভ যে কেবল অন্নপূর্ণর অভাবে, অনেক দিনের পরে আজ তাহা তাহার কাছে মুহূর্তের মধ্যে স্বম্পষ্ট হইল— মুহুর্তের মধ্যে র্তাহার সমস্ত ব্যথিত হৃদয় তাহার চিরন্তন স্থানটি অধিকার করিল। মহেঞ্জের জন্মের পূর্বেও এই দুটি জা যখন বন্ধুভাবে এই পরিবারের সমস্ত সুখদুঃখকে বরণ করিয়া লইয়াছিলেন– পূজায় উৎসবে, শোকে মৃত্যুতে, উভয়ে এই সংসার-রথে একত্রে যাত্রা করিয়াছিলেন– তখনকার সেই ঘনিষ্ঠ সখিত্ব রাজলক্ষ্মীর হৃদয়কে আজ মুহূর্তের মধ্যে আচ্ছন্ন করিয়া দিল । যাহার সঙ্গে স্বদুর অতীতকালে একত্রে জীবন আরম্ভ করিয়াছিলেন, নানা ব্যাঘাতের পর সেই বাল্যসহচরীই পরম দুঃখের দিনে তাহার পার্শ্ববতিনী হইলেন– তখনকার সমস্ত স্থখদুঃখের, সমস্ত প্রিয় ঘটনার এই একটিমাত্র স্মরণাশ্রয় রহিয়াছে । যাহার জন্য রাজলক্ষ্মী ইহাকেও নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করিয়াছিলেন, সেই বা আজ কোথায় । জয়পূর্ণ রোগিণীর পার্থে বসিয়া তাহার দক্ষিণ হস্ত হন্তে লইয়া কছিলেন, “দিদি *