পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি 8ግo বিশৃঙ্খল, সাজসজ্জা অনাদৃত, ছাদের টবে কেহ জল দেয় না, গাছগুলি শুকাইয়া গেছে । মাসিম ছাদে গিয়াছেন বুঝিয়া আশাও ধীরে ধীরে তাহার অনুসরণ করিল। অন্নপূর্ণ তাহাকে বক্ষে টানিয়া লইয়া তাহার মস্তকচুম্বন করিলেন। আশা নত হইয়া দুই হাতে র্তাহার দুই পা ধরিয়া বার বার তাহার পায়ে মাথা ঠেকাইল । কহিল, "মাসিম, আমাকে আশীর্বাদ করো, আমাকে বল দাও । মানুষ যে এত কষ্ট সহ করিতে পারে, তাহা আমি কোনাকালে ভাবিতেও পারিতাম না । মা গো, এমন আর কতদিন সহিবে ।” 墨 অন্নপূর্ণ সেইখানেই মাটিতে বসিলেন, আশা তাহার পায়ে মাথা দিয়া লুটাইয়া পড়িল । অন্নপূর্ণ। আশার মাথা কোলের উপর তুলিয়া লইলেন, এবং কোনো কথা না কহিয়া নিস্তব্ধভাবে জোড়হাত করিয়া দেবতাকে স্মরণ করিলেন । অন্নপূর্ণার স্নেহসিঞ্চিত নিঃশব্দ আশীৰ্বাদ আশার গভীর হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করিয়া অনেক দিন পরে শান্তি আনয়ন করিল। তাহার মনে হইল, তাহার অভীষ্ট যেন সিদ্ধপ্রায় হইয়াছে। দেবতা তাহার মতো মূঢ়কে অবহেলা করিতে পারেন, কিন্তু মাসিমার প্রার্থনা অগ্রাহ করিতে পারেন না। হৃদয়ের মধ্যে আশ্বাস ও বল পাইয়া আশা অনেকক্ষণ পরে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া উঠিয়া বসিল । কহিল, "মাসিম, বিহারী-ঠাকুরপোকে একবার আসিতে চিঠি লিখিয়া দাও।” অন্নপূর্ণ কহিলেন, “না, চিঠি লেখা হইবে না ।” আশা । তবে তাহাকে খবর দিবে কী করিয়া । অন্নপূর্ণ কহিলেন, “কাল আমি বিহারীর সঙ্গে নিজে দেখা করিতে যাইব ।” 8ማ বিহারী যখন পশ্চিমে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিল, তখন তাহার মনে হইল, একটাকোনো কাজে নিজেকে আবদ্ধ না করিলে তাহার আর শান্তি নাই । সেই মনে করিয়া কলিকাতার দরিদ্র কেরানিদের চিকিৎসা ও শুশ্ৰুষার ভার সে গ্রহণ করিয়াছে । গ্রীষ্মকালের ডোবার মাছ যেমন অল্পজল পাকের মধ্যে কোনোমতে শীর্ণ হইয়া খাৰি খাইয়া থাকে, গলি-নিবাসী অল্পাণী পরিবারভারগ্রস্ত কেরানির বঞ্চিত জীবন সেইরূপ—সেই বিবর্ণ কৃশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ভদ্রমণ্ডলীর প্রতি বিহারীর অনেক দিন