পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি & ex বিহারী কহিল, “লইব ।” তখন বিনোদিনী তাহার অঞ্চলের প্রান্ত খুলিয়া হাজার টাকার দুইখানি নোট বিহারীর হাতে দিল । বিহারী স্থগভীর আবেগের সহিত স্থিরদৃষ্টিতে বিনোদিনীর মুখের দিকে চাহিয়া রহিল । খানিক বাদে বিহারী কহিল, “আমি কি তোমাকে কিছু দিতে পারিব না।” বিনোদিনী কহিল, “তোমার চিহ্ন আমার কাছে আছে, তাহা আমার অঙ্গের ভূষণ— তাহ কেহ কাড়িতে পারিবে না। আমার আর কিছু দরকার নাই ।” বলিয়া সে নিজের হাতের সেই কাটা দাগ দেখাইল । বিহারী আশ্চর্য হইয়া রহিল। বিনোদিনী কহিল, “তুমি জান না—এ তোমারই আঘাত—এবং এ আঘাত তোমারই উপযুক্ত । ইহা এখন তুমিও ফিরাইতে পার না।” মাসিমার উপদেশসত্ত্বেও আশা বিনোদিনী সম্বন্ধে মনকে নিষ্কণ্টক করিতে পারে নাই । রাজলক্ষ্মীর সেবায় দুই জনে একত্রে কাজ করিয়াছে, কিন্তু আশা যখনই বিনোদিনীকে দেখিয়াছে তখনই তাহার বুকের মধ্যে ব্যথা লাগিয়াছে— মুখ দিয়া সহজে কথা বাহির হয় নাই, এবং হাসিবার চেষ্টা তাহাকে পীড়ন করিয়াছে। বিনোদিনীর নিকট হইতে সামান্য কোনো সেবা গ্রহণ করিতেও তাহার সমস্ত চিত্ত বিমুখ হইয়াছে। বিনোদিনীর সাজা পান অনেক সময়ে শিষ্টতার খাতিরে তাহাকে গ্রহণ করিতে হইয়াছে, কিন্তু আড়ালে তাহা ফেলিয়া দিয়াছে। কিন্তু আজ যখন বিদায়কাল উপস্থিত হইল— মাসিমা সংসার হইতে দ্বিতীয়বার চলিয়া যাইতেছেন বলিয়া আশার হৃদয় যখন অশ্রজলে আর্দ্র হইয়া গেল, তখন সেই সঙ্গে বিনোদিনীর প্রতি তাহার করুণার উদয় হইল । যে একেবারে চলিয়া যাইতেছে তাহণকে মাপ করিতে পারে না, এমন কঠিন মন অল্পই আছে। আশা জানিত, বিনোদিনী মহেন্দ্রকে ভালোবাসে ; মহেন্দ্রকে ভালো না বালিবেই বা কেন । মহেন্দ্রকে ভালোবাসা যে কিরূপ অনিবার্য, আশা তাহা নিজের হৃদয়ের ভিতর হইতেই জানে। নিজের ভালোবাসার সেই বেদনায় বিনোদিনীর প্রতি আজ তাহার বড়ো দয়া হইল । বিনোদিনী মহেন্দ্রকে চিরদিনের জন্য ছাড়িয়া যাইতেছে, তাহার যে দুবিষহ দুঃখ, তাহা আশা অতিবড়ো শত্রুর জন্যও কামনা করিতে পারে না— মনে করিয়া তাহার চক্ষে জল আসিল ; এককালে সে বিনোদিনীকে ভালোবাসিয়াছিল— সেই ভালোবাসা তাহাকে স্পর্শ করিল। সে ধীরে ধীরে বিনোদিনীর কাছে আসিয়া অত্যস্ত করুণার সঙ্গে, স্নেহের সঙ্গে, বিষাদের সঙ্গে মৃদুস্বরে কহিল, “দিদি, তুমি চলিলে ?” বিনোদিনী অাশার চিবুক ধরিয়া কহিল, “ই বোন, আমার যাইবার সময় t) وا) سے O\