পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९२8 রবীন্দ্র-রচনাবলী অপথ্য ছিল, তাহার প্রতি তাহার বিশেষ আসক্তি— বাপকে সেই-সমস্ত প্রলোভন হইতে যথাসম্ভব ঠেকাইম্বা রাখা মেয়ের এক কাজ ছিল । তাই আজ সে বাপের হাত ধরিয়া উদবেগের সহিত বলিল, “বাবা, তুমি আমার কথা রেখো— রাখবে ?” ബ বাবা হাসিয়া কহিলেন, "মানুষ পণ করে পণ ভাঙিয়া ফেলিয়া হাফ ছাড়িবার জন্ত । অতএব কথা না-দেওয়াই সব চেয়ে নিরাপদ ।” তাহার পরে বাপ চলিয়া আসিলে ঘরে কপাট পড়িল । তাহার পরে কী হইল কেহ জানে না । বাপ ও মেয়ের অশ্রুহীন বিদায়ব্যাপার পাশের ঘর হইতে কৌতুহলী অন্তঃপুরিকার দল দেখিল ও শুনিল । অবাক কাও ! খোট্টার দেশে থাকিয়া খোটা হইয়া গেছে ! মায়ামমতা একেবারে নাই ! আমার শ্বশুরের বন্ধু বনমালীবাবুই আমাদের বিবাহের ঘটকালি করিয়াছিলেন । তিনি আমাদের পরিবারেরও পরিচিত । তিনি আমার শ্বশুরকে বলিয়াছিলেন, *সংসারে তোমার তো ঐ একটি মেয়ে । এখন ইহাদেরই পাশে বাড়ি লইয়া এইখানেই জীবনটা কাটাও ” তিনি বলিলেন, "ধাহা দিলাম তাহ উজাড় করিয়াই দিলাম। এখন ফিরিয়া তাকাইতে গেলে দুঃখ পাইতে হইবে । অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার রাখিতে যাইবার মতো এমন বিড়ম্বনা আর নাই ।” সব শেষে আমাকে নিভৃতে লইয়া গিয়া অপরাধীর মতো পসংকোচে বলিলেন, “আমার মেয়েটির বই পড়িবার শখ, এবং লোকজনকে খাওয়াইতে ও বড়ো ভালোবাসে । এজন্য বেহাইকে বিরক্ত করিতে ইচ্ছা করি না। আমি মাঝে মাঝে তোমাকে টাকা পাঠাইব । তোমার বাবা জানিতে পারিলে কি রাগ করিবেন।” প্রশ্ন শুনিয়া কিছু আশ্চর্য হইলাম। সংসারে কোনো একটা দিক হইতে অর্থসমাগম হইলে বাবা রাগ করিবেন, তাহার মেজাজ এত খারাপ তো দেখি নাই । যেন ঘুষ দিতেছেন এমনিভাবে আমার হাতে একখানা একশো টাকার নোট গুজিয়া দিয়াই আমার শ্বশুর দ্রুত প্রস্থান করিলেন ; আমার প্রণাম লইবার জন্য সৰুর করিলেন না । পিছন হইতে দেখিতে পাইলাম, এইবার পকেট হইতে রুমাল दांश्द्रि इझेल । আমি স্তব্ধ হইয়া বলিয়া ভাবিতে লাগিলাম। মনে বুঝিলাম, ইছারা অন্ত জাতের মহিষ । বন্ধুদের অনেককেই তো বিবাহ করিতে দেখিলাম। মন্ত্র পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্ত্রীটিকে