পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ । ২৮৩ একবার নিশ্বাস ফেলিয়া, একটুখানি উসথুস করিয়া যতীন বলিল, “মাসি, মণি যদি জেগেই থাকে তা হলে একবার যদি তাকে—*

  • এখনি ডেকে দিচ্ছি, বাবা।” “আমি বেশিক্ষণ তাকে এ ঘরে রাখতে চাই নে— কেবল পাচ মিনিট— দুটো

একটা কথা যা বলবার আছে— মাসি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া মণিকে ডাকিতে অসিলেন । এদিকে যতীনের নাড়ী দ্রুত চলিতে লাগিল ৷ যতীন জানে, আজ পর্যন্ত সে মণির সঙ্গে ভালো করিয়া কথা জমাইতে পারে নাই। দুই যন্ত্র দুই স্বরে বাধা, এক সঙ্গে আলাপ চলা বড়ো কঠিন । মণি তাহার সঙ্গিনীদের সঙ্গে অনর্গল বকিতেছে হাসিতেছে, দূর হইতে তাহাই শুনিয়া যতীনের মন কতবার ঈর্ষায় পীড়িত হইয়াছে। যতীন নিজেকেই দোষ দিয়াছে— সে কেন অমন সামান্ত স্বাহ-তাহা লইয়া কথা কহিতে পারে না। পারে না যে তাহাও তো নহে, নিজের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যতীন সামান্ত বিষয় লইয়াই কি আলাপ করে না। কিন্তু পুরুষের স্বাহ-তাহা তো মেয়েদের ঘহি-তাহার সঙ্গে ঠিক মেলে না। বড়ো কথা একলাই একটানা বলিয়া যাওয়া চলে, অন্ত পক্ষ মন দিল কি না খেয়াল না করিলেই হয়, কিন্তু তুচ্ছ কথায় নিয়ত দুই পক্ষের যোগ থাকা চাই ; বাশি একাই বাজিতে পারে, কিন্তু দুইয়ের মিল না থাকিলে করতালের খচমচ জমে না । এইজন্ত কত সন্ধ্যাবেলায় যতীন মণির সঙ্গে যখন খোলা বারান্দায় মাদুর পাতিয়া বসিয়াছে, দুটো-চারটে টানাবোন কথার পরেই কথার স্বত্র একেবারে ছিড়িয়া ফাক হইয়া গেছে ; তাহার পরে সন্ধ্যার নীরবতা যেন লজ্জায় মরিতে চাহিয়াছে। যতীন বুঝিতে পারিয়াছে, মণি পালাইতে পারিলে বঁাচে ; মনে মনে কামনা করিয়াছে, এখনই কোনো-একজন তৃতীয় ব্যক্তি যেন আসিয়া পড়ে । কেননা, দুষ্ট জনে কথা কহা কঠিন, তিন জনে সহজ । মণি আসিলে আজ কেমন করিয়া কথা আরম্ভ করিবে, যতীন তাহাই ভাবিতে লাগিল। ভাবিতে গেলে কথাগুলো কেমন অস্বাভাবিক-রকম বড়ো হইয়া পড়ে— সে-সৰ কথা চলিবে না। যতীনের আশঙ্কা হইতে লাগিল, আজকের রাত্রের পাচ মিনিটও ব্যর্থ হইবে । অথচ, তাহার জীবনে এমনতরো নিরালা পাচ মিনিট আর ক’টাই বা বাকি আছে । WS)

  • একি, বউ, কোথাও যাচ্ছ না কি।” “সীতারামপুরে যাব।”