পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 о о রবীন্দ্র-রচনাবলী মধ্যেই কি অমরাবতীর সেই বাণী ছিল না ধে, কৃচ্ছসাধনে মুক্তি নেই, মুক্তি আছে প্রেমে। সেই ভক্তহৃদয়ের অন্ন-উৎসর্গের মধ্যে মাতৃপ্রাণের যে-সত্য ছিল সেই সত্যটি থেকেই কি বুদ্ধ বলেন নি এক পুত্রের প্রতি মাতার যে-প্রেম সেই অপরিমেয় প্রেমে সমস্ত বিশ্বকে আপন করে দেখাকেই বলে ব্রহ্মবিহার ? অর্থাৎ, মুক্তি শূন্যতায় নয়, পূর্ণতায় ; এই পূর্ণতাই কৃষ্টি করে, ধ্বংস করে না। মানবাত্মার যে প্রেম অসীম আত্মার কাছে আপনাকে একান্ত নিবেদন ক'রে দিয়েই আনন্দ পায়, তার চেয়ে আর কিছুই চায় না, যিশুখৃস্ট তারই সহজ স্বরূপটিকে বাহিরের মূর্তিতে কোথায় দেখেছিলেন। ইজদেব আপন স্বষ্টি থেকে এই মূর্তিটিকে তার কাছে পাঠিয়েছিলেন। মার্থ আর ম্যারি দুজনে তার সেবা করতে এসেছিল। মার্থ ছিল কর্তব্যপরায়ণা, লেবার কঠোরতায় সে নিত্যনিয়ত ব্যস্ত। ম্যারি সেই ব্যস্ততার ভিতর দিয়ে আত্মনিবেদনের পূর্ণতাকে বহু প্রয়াসে প্রকাশ করে নি। সে আপন বহুমূল্য গন্ধতৈল খৃস্টের পায়ে উজাড় করে ঢেলে দিলে। সকলে বলে উঠল, "এ যে অন্যায় অপব্যয় । খৃষ্ট বললেন, 'না, ন, ওকে নিবারণ কোরো না।’ স্বাক্টই কি অপব্যয় নয়। গানে কি কারও কোনো লাভ আছে। চিত্রকলায় কি অন্নবস্ত্রের অভাব দূর হয়। কিন্তু, রসম্বষ্টির ক্ষেত্রে মানুষ আপন পূর্ণতাকে উংসর্গ ক’রে দিয়েই পূর্ণতার ঐশ্বর্য লাভ করে। সেই ঐশ্বর্য শুধু তার সাহিত্যে ললিতকলায় নয়, তার আত্মবিসর্জনের লীলাভূমি সমাজে নানা স্বষ্টিতেই প্রকাশ পায়। সেই স্বাক্টর মূল্য জীবনযাত্রার উপযোগিতায় নয়, মানবাত্মার পূর্ণস্বরূপের বিকাশে– তা অহৈতুক, তা আপনাতে আপনি পর্যাপ্ত। ধিওখুষ্ট ম্যারির চরম আত্মনিবেদনের সহজ রূপটি দেখলেন ; তখন তিনি নিজের অন্তরের পূর্ণতাকেই বাহিরে দেখলেন ; ম্যারি যেন তার আত্মার কৃষ্টিরুপেই তার সম্মুখে অপরূপ মাধুর্ষে প্রকাশিত হল। এমনি করেই মানুষ আপন স্বষ্টিকার্ষে আপন পূর্ণতাকে দেখতে চাচ্ছে। কৃচ্ছসাধনে নয়, উপকরণসংগ্রহে নয়। তার আত্মার আনন্দ থেকে তাকে উদ্ভাবিত করতে হবে স্বৰ্গলোক— লক্ষপতির কোষাগার নয়, পৃথ্বীপতির জয়স্তম্ভ নয়। তাকে যেন লোভে না ভোলায়, দত্তে অভিভূত না করে ; কেননা সে সংগ্রহকর্তা নয়, নির্মাণকর্তা নয়, সে স্বষ্টিকর্তা । ১৩৩ ৯