পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যের পথে 8 o'S সাহিত্যধর্ম কোটালের পুত্র, সওদাগরের পুত্র, রাজপুর, এই তিনজনে বহির হন রাজকন্যার সন্ধানে । বস্তুত রাজকথা ব'লে যে একটি সত্য আছে তিন রকমের বুদ্ধি তাকে তিন পথে সন্ধrন করে । কোটালের পুত্রের ডিটেকটিভ-বুদ্ধি, সে কেবল জেরা করে। করতে করতে কন্যার নাড়ীনক্ষত্র ধরা পড়ে ; রূপের আড়াল থেকে বেরিয়ে আলে শরীরতত্ত্ব, গুণের আবরণ থেকে মনস্তত্ব। কিন্তু এই তত্ত্বের এলেকায় পৃথিবীর সকল কন্যাই সমান দরের মামুৰ— ঘুটেকুড়োনির সঙ্গে রাজকন্যার প্রভেদ নেই। এখানে বৈজ্ঞানিক বা দার্শনিক তাকে যে-চক্ষে দেখেন সে-চক্ষে রসবোধ নেই, অাছে কেবল প্রশ্নজিজ্ঞাসা । আর-একদিকে রাজকন্যা কাজের মানুষ । তিনি রাখেন বাড়েন, স্বতে কাটেন, ফুলকাটা কাপড় বোনেন । এখানে সওদাগরের পুত্র তাকে যে চক্ষে দেখেন সে চক্ষে না আছে রস, না আছে প্রশ্ন ; আছে মুনফার হিসাব । রাজপুত্র বৈজ্ঞানিক নন— অর্থশাস্ত্রের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন নি— তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন, বোধ করি, চব্বিশ বছর বয়স এবং তেপাস্তরের মাঠ । দুর্গম পথ পার হয়েছেন BBB BB BS BBB BB BSB BBBBB BBYS gB S BBBBB BD ল্যাবরেটরিতে নয়, হাটবাজারে নয়, হৃদয়ের সেই নিত্য বসগুলোকে যেখানে কাব্যের কল্পলতায় ফুল ধরে । যাকে জানা যায় না, যার সংজ্ঞানির্ণয় করা যায় না, বাস্তব ব্যবহারে যার মূল্য নেই, যাকে কেবল একান্ত ভাবে বোধ করা যায়, তারই প্রকাশ সাহিত্যকলায়, রসকলায়। এই কলা জগতে যার প্রকাশ কোনো সমজদার তাকে ঠেলা দিয়ে জিজ্ঞাসা করে না, ‘তুমি কেন। সে বলে 'তুমি ষে তুমিই, এই আমার যথেষ্ট । রাজপুত্রও রাজকন্যার কানে-কানে এই কথাই বলেছিলেন । এই কথাটা বলবার জন্তে সাজাহানকে তাজমহল বানাতে হয়েছিল। যাকে সীমায় বাধতে পারি তার সংজ্ঞানির্ণয় চলে ; কিন্তু, যা সীমার বাইরে, যাকে ধরে ছুয়ে পাওয়া যায় না, তাকে বুদ্ধি দিয়ে পাই নে, বোধের মধ্যে পাই। উপনিষদ ব্ৰহ্ম সম্বন্ধে বলেছেন, তাকে না পাই মনে, না পাই বচনে, তাকে যখন পাই আনন্দবোধে, তখন আর ভাবনা থাকে না।— আমাদের এই বোধের ক্ষুধা আত্মার ক্ষুধা। সে এই বোধের দ্বারা আপনাকে জানে। যে-প্রেমে, ষে-ধ্যানে, ষে-দর্শনে কেবলমাত্র এই বোধের ক্ষুধা মেটে তাই স্থান পায় সাহিত্যে, রূপকলায়। দেয়ালে-বাধা খণ্ড আকাশ আমার আপিল-ঘরটার মধ্যে সম্পূর্ণ ধরা পড়ে গেছে।