পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যের পথে J. 8 e (t ও অন্ত কলায় ব্যঙ্গের ভাবে ছাড়া শ্রদ্ধার ভাবে তাকে স্বীকার করা হয় নি। মাছবের আহারের ইচ্ছা প্রবল সত্য, কিন্তু সার্থক সত্য নয়। পেট-ভরানো ব্যাপারটা মানুষ তার কলালোকের অমরাবতীতে স্থান দেয় নি। স্ত্রীপুরুষের মিলন আহার ব্যাপারের উপরের কোঠায় ; কেননা, ওর সঙ্গে মনের মিলনের নিবিড় যোগ । জীবধর্মের মূল প্রয়োজনের দিক থেকে এটা গৌণ, কিন্তু মানুষের জীবনে তা মুখ্যকে বহু দূরে ছাড়িয়ে গেছে। প্রেমের মিলন আমাদের অন্তর বাহিরকে নিবিড় চৈতন্তের দীপ্তিতে উদ্ভালিত ক’রে তোলে। বংশরক্ষার মুখ্য তত্ত্বটুকুতে সেই দীপ্তি নেই। তাই শরীরবিজ্ঞানের কোঠাতেই তার প্রধান স্থান । স্ত্রীপুরুষের মনের মিলনকে প্রকৃতির আদিম প্রয়োজন থেকে ছাড়িয়ে ফেলে তাকে তার নিজের বিশিষ্টতাতেই দেখতে পাই । তাই কাব্যে ও সকল প্রকার কলায় সে এতটা জায়গা জুড়ে বসেছে । যৌনমিলনের যে চরম সার্থকতা মানুষের কাছে তা ‘প্রজনার্থং” নয়, কেননা সেখানে সে পশু ; সার্থকতা তার প্রেমে, এইখানে সে মান্ধব । তবু যৌনমিলনের জীবধর্ম ও মানুষের চিত্তধর্ম উভয়ের সীমানা-বিভাগ নিয়ে সহজেই গোলমাল বাধে। সাহিত্যে আপন পুরো খাজনা আদায়ের দাবি ক’রে পশুর হাত মাছবের হাত উভয়ে একসঙ্গেই অগ্রসর হয়ে আসে । আধুনিক সাহিত্যে এই নিয়ে দেওয়ানি ফৌজদারি মামলা 5ल८छ्झे । উপরে যে পশু শব্দটা ব্যবহার করেছি ওটা নৈতিক ভালোমন্দ বিচারের দিক থেকে নয় ; মানুষের আত্মবোধের বিশেষ সার্থকতার দিক থেকে । বংশরক্ষাঘটিত পশুধর্ম মানুষের মনস্তত্ত্বে ব্যাপক ও গভীর, বৈজ্ঞানিক এমন কথা বলেন । কিন্তু, সে হল বিজ্ঞানের কথা ; মামুষের জ্ঞানে ও ব্যবহারে এর মূল্য আছে। কিন্তু, রসবোধ নিয়ে ষে সাহিত্য ও কলা সেখানে এর সিদ্ধাস্ত স্থান পায় না। অশোকবনে সীতার ছুরারোগ্য ম্যালেরিয়া হওয়া উচিত ছিল, এ কথাও বিজ্ঞানের ; সংসারে এ কথার জোর আছে, কিন্তু কাব্যে নেই। সমাজের অনুশাসন সম্বন্ধেও সেই কথা । সাহিত্যে ধৌনমিলন নিয়ে ষে তর্ক উঠেছে সামাজিক হিতবুদ্ধির দিক থেকে তার সমাধান হবে না, তার সমাধান কলারসের দিক থেকে । অর্থাৎ, যৌনমিলনের মধ্যে যে দুটি মহল আছে মানুষ তার কোনটিকে অলংকৃত ক’রে নিত্যকালের গৌরব দিতে চায়, সেইটিই হল বিচাধ । মাঝে মাঝে এক-একটা যুগে বাহ কারণে বিশেষ কোনো উত্তেজনা প্রবল হয়ে ওঠে। সেই উত্ত্বেজন সাহিত্যের ক্ষেত্র অধিকার ক’রে তার প্রকৃতিকে অভিভূত করে দেয়।