পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪২৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী স্বন্দরী মেয়েকেও দেখো, সার্ডিন মাছকেও ; একই ভাষায় বলতে কুষ্ঠিত হয়ে না, কী স্বনীর। এ দেখা নৈর্ব্যক্তিক—নিছক দেখা ; এর পঙক্তিতে চটিজুতোর দোকানকেও বাদ দেওয়া যায় না । কাব্যে বিষয়ীর আত্মতা ছিল উনিশ শতাব্দীতে, বিশ শতাব্দীতে বিষয়ের আত্মতা । এইজন্তে কাব্যবস্তুর বাস্তবতার উপরেই ঝেণক দেওয়া হয়, অলংকারের উপর নয়। কেননা, অলংকারটা ব্যক্তির নিজেরই রুচিকে প্রকাশ করে, খাটি বাস্তবতার জোর হচ্ছে বিয়য়ের নিজের প্রকাশের জন্তে । সাহিত্যে আবির্ভাবের পূর্বেই এই আধুনিকতা ছবিতে ভর করেছিল। চিত্রকলা যে ললিতকলার অঙ্গ, এই কথাটাকে অস্বীকার করবার জন্যে সে বিবিধ প্রকারে উৎপাত শুরু করে দিলে। সে বললে, আর্টের কাজ মনোহারিতা নয়, মনোজয়িতা ; তার লক্ষণ লালিত্য নয়, যাথার্থ । চেহারার মধ্যে মোহকে মানলে না, মানলে ক্যারেক্টারকে অর্থাৎ একটা সমগ্রতার আত্মঘোষণাকে। নিজের সম্বন্ধে সেই চেহারা আর-কিছু পরিচয় দিতে চায় না, কেবল জোরের সঙ্গে বলতে চায় ‘আমি দ্রষ্টব্য’। তার এই দ্রষ্টব্যতার জোর হাবভাবের দ্বারা নয়, প্রকৃতির নকলনবিশির দ্বারা নয়, আত্মগত স্বষ্টিসত্যের দ্বারা । এই সত্য ধৰ্মনৈতিক নয়, ব্যবহারনৈতিক নয়, ভাবব্যঞ্জক নয়, এ সত্য স্বষ্টিগত। অর্থাৎ, সে হয়ে উঠেছে ব’লেই তাকে স্বীকার করতে হয়। যেমন আমরা ময়ুরকে মেনে নিই, শকুনিকেও মানি, শুয়োরকে অস্বীকার করতে পারি নে, হরিণকেও তাই । কেউ স্বন্দর, কেউ অসুন্দর ; কেউ কাজের, কেউ আকাজের ; কিন্তু স্বাক্টর ক্ষেত্রে কোনো ছুতোয় কাউকে বাতিল করে দেওয়া অসম্ভব । সাহিত্যে, চিত্রকলাতেও সেইরকম। কোনো রূপের স্বষ্টি যদি হয়ে থাকে তো জার-কোনো জবাবদিহি নেই ; যদি না হয়ে থাকে, যদি তার সত্তার জোর না থাকে, শুধু থাকে ভাবলালিত্য, তা হলে সেটা বর্জনীয়। এইজন্যে আজকের দিনে যে-সাহিত্য আধুনিকের ধর্ম মেনেছে, সে সাবেক-কালের কৌলীন্তের লক্ষণ সাবধানে মিলিয়ে জাত বঁচিয়ে চলাকে অবজ্ঞা করে, তার বাছবিচার নেই। এলিয়টের কাব্য এইরকম হালের কাব্য, ব্রিজেসের কাব্য তা নয়। এলিয়ট লিখছেন— এ-ঘরে ও-ঘরে যাবার রাস্তায় সিদ্ধ মাংসর গন্ধ, তাই নিয়ে শীতের সন্ধ্যা জমে এল । এখন ছ’টা—