পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8&bア রবীন্দ্র-রচনাবলী The notion of some infinitely gentle Infinitely suffering thing. এইখানেই অ্যাপলোর সঙ্গে ব্যাঙের মিল আর টিকল না। এইখানে কুপমণ্ডুকের মক্‌মক্‌ শব্দ অ্যাপলোর হাসিকে পীড়। দিল। একটা কথা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, কবি নিতান্তই বৈজ্ঞানিকভাবে নির্বিকার নন। পেলে সংসারটার প্রতি তার বিতৃষ্ণ এই খেলো সংসারের বর্ণনার ভিতর দিয়েই প্রকাশ পাচ্ছে । তাই কবিতাটির উপসংহারে যে কথা বলেছেন সেটা এত কড়া— মুখের উপরে একবার হাত বুলিয়ে হেসে নাও । দেখো, সংসারটা পাক খাচ্ছে যেন বুড়িগুলো ঘুটে কুড়োচ্ছে পোড়ো জমি থেকে । এই ঘুটে-কুড়োনো বুড়ো সংসারটার প্রতি কবির অনভিরুচি স্পষ্টই দেখা যায়। সাবেক কালের সঙ্গে প্রভেদটা এই যে, রঙিন স্বপ্ন দিয়ে মনগড়া সংসারে নিজেকে ভুলিয়ে রাখার ইচ্ছেটা নেই। কৰি এই কাদা-ঘাটাঘাটির মধ্যে দিয়েই কাব্যকে ইটিয়ে নিয়ে চলেছেন, ধোপ-দেওয়া কাপড়টার উপর মমতা না ক’রে । কাদার উপর অহরাগ আছে ব’লে নয়, কিন্তু কাদার সংসারে চোখ চেয়ে কাদাটাকেও জানতে হবে, মানতে হবে ব’লেই। যদি তার মধ্যেও অ্যাপলোর হাসি কোথাও ফোটে সে তো ভালোই, যদি না’ও ফোটে, তা হলে ব্যাঙের লম্ফমান অট্টহাস্তকে উপেক্ষা করবার প্রয়োজন নেই । ওটাও একটা পদার্থ তো বটে— এই বিশ্বের সঙ্গে মিলিয়ে ওর দিকেও কিছুক্ষণ চেয়ে দেখা যায়, এর তরফেও কিছু বলবার আছে। স্থসজ্জিত ভাষার বৈঠকখানায় ঐ ব্যাঙটাকে মানাবে না, কিন্তু অধিকাংশ জগৎসংসার ঐ বৈঠকখানার বাইরে। সকালবেলায় প্রথম জাগরণ । সেই জাগরণে প্রথমটা নিজের উপলব্ধি, চৈতন্তের নূতন চাঞ্চল্য । এই অবস্থাটাকে রোমাটিক বলা যায়। সম্ভ-জাগা চৈতন্য বাইরে নিজেকে বাজিয়ে দেখতে বেরোয় । মন বিশ্বস্বষ্টিতে এবং নিজের রচনায় নিজের চিস্তাকে, নিজের বাসনাকে রূপ দেয় । অস্তরে যেটাকে চায় বাইরে সেটাকে নানা মায়া দিয়ে গড়ে । তার পরে আলো তীব্র হয়, অভিজ্ঞতা কঠোর হতে থাকে, সংসারের আনোলনে অনেক মায়াজাল ছিন্ন হয়ে যায়। তখন অনাবিল আলোকে, অনাবৃত আকাশে, পরিচয় ঘটতে থাকে স্পষ্টতর বাস্তবের সঙ্গে । এই পরিচিত বাস্তবকে ভিন্ন কবি ভিন্নরকম ক’রে অভ্যর্থনা করে । কেউ দেখে একে অবিশ্বাসের চোখে বিদ্রোহের ভাবে ; কেউ বা একে এমন অশ্রদ্ধা করে যে, এর প্রতি রূঢ়ভাবে নির্লজ্জ ব্যবহার করতে কুষ্ঠিত হয় না। আবার থর আলোকে অতিপ্রকাশিত এর যে-আকৃতি তারও