পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৯8 রবীন্দ্র-রচনাবলী সুরঙ্গম । সত্যি। বাবা জুয়ো খেলত । রাজ্যের যত যুবক আমাদের ঘরে জুটত—মদ খেত আর জুয়ো খেলত। সুদৰ্শন । তুই কী করতিস ? সুরঙ্গমা। মা, তবে সব শুনেছ। আমি নষ্ট হবার পথে গিয়েছিলুম। বাবা' ইচ্ছে করেই আমাকে সে-পথে দাড় করিয়েছিলেন । আমার মা ছিল না । সুদৰ্শন। রাজা যখন তোর বাপকে নির্বাসিত করে দিলেন তখন তোর রাগ হয় নি ? স্বরঙ্গম । খুব রাগ হয়েছিল—ইচ্ছে হয়েছিল কেউ যদি রাজাকে মেরে ফেলে তো বেশ হয় । সুদৰ্শন । রাজা তোর বাপের কাছ থেকে ছাড়িয়ে এনে কোথায় রাখলেন ? সুরঙ্গম । কোথায় রাখলেন কে জানে । কিন্তু কী কষ্ট গেছে ! আমাকে যেন ছুচ ফোটাত, আগুনে পোড়াত । সুদৰ্শন । কেন, তোর এত কষ্ট কিসের ছিল । সুরঙ্গমা। আমি যে নষ্ট হবার পথে গিয়েছিলুম—সে-পথ বন্ধ হতেই মনে হল আমার যেন কোনো আশ্রয়ই রইল না। আমি কেবল খাচায়-পোর বুনো জন্তুর মত কেবল গর্জে বেড়াতুম এবং সবাইকে আঁচড়ে কামড়ে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করত। সুদৰ্শন । রাজাকে তখন তোর কী মনে হত ! সুরঙ্গম। । উঃ কী নিষ্ঠুর ! কী নিষ্ঠুর : কী অবিচলিত নিষ্ঠুরতা ! সুদৰ্শন সেই রাজার পরে তোর এত ভক্তি হল কী করে ? সুরঙ্গমা | কী জানি মা ! এত অটল এত কঠোর বলেই এত নির্ভর এত ভরস । নইলে আমার মতো নষ্ট আশ্রয় পেত কেমন করে ? সুদৰ্শন । তোর মন বদল হল কখন ? সুরঙ্গম । কী জানি কখন হয়ে গেল । সমস্ত দুরন্তপন হার মেনে একদিন মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তখন দেখি যত ভয়ানক ততই সুন্দর। বেঁচে গেলুম, বেঁচে গেলুম, জন্মের মতো বেঁচে গেলুম। সুদৰ্শন । আচ্ছ সুরঙ্গম, মাথা খা, সত্যি করে বল আমার রাজাকে দেপতে কেমন ? আমি একদিনও তাকে চোখে দেখলুম না। অন্ধকারেই আমার কাছে আসেন অন্ধকারেই যান। কতলোককে জিজ্ঞাসা করি কেউ স্পষ্ট করে জবাব দেয় না—সবাই যেন কী একটা লুকিয়ে রাখে। সুরঙ্গমা। আমি সত্যি বলছি রানী, ভালো করে বলতে পারব না। তিনি কি সুন্দর ? না, লোকে যাকে সুন্দর বলে তিনি তা নন।