পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা ఇఏరి জোরের সঙ্গে, কিন্তু তার চেয়ে জোর আছে এমন কোনো একটা চমৎকার চিন্ত পড়াশুনোর কাধে চেপে বসে। সমালোচনার জন্তে মডার্নরিভিয়ু থেকে র্তাকে লোভনীয় বই পাঠানো হয় বৌদ্ধধ্বংসাবশেষের পুরাবৃত্ত নিয়ে,—অমুদঘাটিত বইয়ের সামনে স্থির “হয়ে বসে থাকেন, এক ভাঙা বৌদ্ধকূপেরই মতে যার উপরে চেপে আছে বহুশত বংসরের মেীন। সম্পাদক ব্যস্ত হয়ে ওঠেন, কিন্তু জ্ঞানীর স্তুপাকার জ্ঞান যখন একবার টলে তখন তার দশা এইরকমই হয়ে থাকে । হাতি যখন চোরাবালিতে পা দেয় তখন তার বঁচিবার উপায় কী ? এতদিন পরে অবনীশের মনে একটা পরিতাপ ব্যথা দিতে লাগল। র্তার মনে হল, তিনি হয়তো পুথির পাতা থেকে চোখ তুলে দেখবার অবকাশ না পাওয়াতে দেপেন নি যে, শোভনলালকে তার মেয়ে ভালোবেসেছে, কারণ শোভনের মতো ছেলেকে না ভালোবাসতে পারাটাই অস্বাভাবিক । সাধারণভাবে বাপ-জাতটার পরেই রাগ ধরল, নিজের উপরে, ননিগোপালের পরে । এমন সময় শোভনের কাছ থেকে এক চিঠি এল । প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তির জন্যে গুপরাজবংশের ইতিহাস আশ্রয় করে পরীক্ষার প্রবন্ধ লিখবে বলে সে র্তার লাইব্রেরি পেকে গুটিকতক বই ধার চায়। তখনই তিনি তাকে বিশেষ আদর করে চিঠি লিপলেন, বললেন, “পূর্বের মতোই আমার লাইব্রেরিতে বসেই তুমি কাজ করবে, কিছুমাত্র সংকোচ করবে না ।” শোভনলালের মনটা চঞ্চল হয়ে উঠল। সে ধরে নিলে, এমন উৎসাহপূর্ণ চিঠির পিছনে হয়তো লাবণ্যর সম্মতি প্রচ্ছন্ন আছে। সে লাইব্রেরিতে আসতে আরম্ভ করলে। ঘরের মধ্যে যাওয়া-আসার পথে দৈবাং কখনো ক্ষণকালের জন্যে লাবণ্যর সঙ্গে দেপা হয়। তপন শোভন গতিটাকে একটু মন্দ করে আনে। ওর একান্ত ইচ্ছে, লাবণ্য তাকে একটা কোনো কথা বলে, জিজ্ঞাসা করে, কেমন আছ ; যে-প্রবন্ধ নিয়ে ও ব্যাপৃত, সে-সম্বন্ধে কিছু কৌতুহল প্রকাশ করে। যদি করত তবে খাতা খুলে এক সময় লাবণ্যর সঙ্গে আলোচনা করতে পারলে ও বেঁচে যেত । ওর কতকগুলি নিজের উদ্ভাবিত বিশেষ মত সম্বন্ধে লাবণ্যর মত কী, জানবার জন্যে ওর অত্যন্ত ঔৎসুক্য । কিন্তু এ-পর্যস্ত কোনো কথাই হল না, গায়ে-পড়ে কিছু বলতে পারে এমন সাহসও ওর নেই। এমন কয়েক দিন যায়। সেদিন রবিবার। শোভনলাল তার খাতাপত্র টেবিলের উপর সাজিয়ে একখানা বই নিয়ে পাতা ওলটাচ্ছে, মাঝে মাঝে নোট নিচ্ছে। তখন দুপুরবেলা, ঘরে কেউ নেই। ছুটির দিনের সুযোগ নিয়ে অবনীশ কোন এক বাড়িতে যাচ্ছেন তার নাম করলেন না,—বলে গেলেন, আজ আর চা খেতে আসবেন না।