পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের কবিতা Vවීණ කු “বাবা, বিলাহযোগ্য বয়সের মুর এপনও তোমার কথাবার্তায় লাগছে না, শেষে সমস্তটা বাল্যবিবাহ হয়ে না দাড়ায় ।” "মাসিম, আমার মনের স্বকীয় একটা স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি আছে, তারই গুণে আমার হৃদয়ের ভারী কথাগুলোও মূপে খুব হালকা হয়ে ভেসে ওঠে, তাই বলে তার ওজন কমে না ।" যোগমায়া গেলেন ভোজের ব্যবস্থা করতে । অমিত এ-ঘরে ও-ঘরে ঘুরে বেড়ালে, দর্শনীয় কাউকে দেপতে পেলে না । দেপা হল যতিশংকরের সঙ্গে । মনে পড়ল আজ তাকে অ্যান্টনি ক্লিয়োপ্যাট্রা পড়বার কথা । অমিতর মূপের ভাব দেপেই যতি বুঝেছিল জীবের প্রতি দয়া করেই আজ তার ছুটি নেওয়৷ আগু কৰ্তব্য । সে বললে, “অমিতদা, কিছু যদি মনে না কর, আজ আমি ছুটি চাই, আপার শিলঙে বেড়াতে যাব |" অমিত পুলকিত হয়ে বললে, “পড়ার সময় যার ছুটি মিতে জানে না, তারা পড়ে, পড়া হজম করে না । তুমি চুটি চাইলে আমি কিছু মনে করব এমন অসম্ভব ভয় করছ কেন ?" “কলি রবিবার ছুটি তো আছেই, পাছে তুমি তাই ভাব - “ “ইস্কুলমাস্টারি বৃদ্ধি আমার নয় ভাই, বরাদ ছুটিকে ছুটি বলিই নে ! যে-চুটি নিয়মিত, তাকে ভোগ করা, আর বাধা পশুকে শিকার করা একই কথা । ওতে ছুটির রস ফিকে হয়ে যায় !" হঠাৎ যে-উৎসাহে অমিতকুমার ছুটিতত্ত্ব ব্যাপায় মেতে উঠল তার মূল কারণটা অল্পমান করে যতির খুব মজা লাগল। সে বললে, “কয়দিন থেকে ছুটিতত্ত্ব সম্বন্ধে তামার মাথায় নতুন নতুন ভাব উঠছে । সেদিনও আমাকে উপদেশ দিয়েছিলে । এমন আর কিছুদিন চললেই ছুটি নিতে আমার হাত পেকে যাবে।" “সেদিন কী উপদেশ দিয়েছিলুম ?” “বলেছিলে, ‘অকর্তব্যবৃদ্ধি মানুষের একটা মহা গুণ । তার ডাক পড়লেই একটুও বিলম্ব করা উচিত হয় না ’ বলেই বই বন্ধ করে তখনই বাইরে দিলে ষ্টুট । বাইরে হয়তো একটা অকৰ্ত্তব্যের কোথাও আবির্ভাব হয়েছিল, লক্ষ্য করি নি ।” যতির বয়স বিশের কোঠায়। অমিতর মনে যে-চাঞ্চল্য উঠেছে ওর নিজের মনেও তার আন্দোলনট এসে লাগছে । ও লাবণাকে এতদিন শিক্ষকজাতীয় বলেই ইউরেছিল, আজ অমিতর অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পেরেছে, সে নারীজাতীয় ।