পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা প্রজা 9ఫి(t গহন অরণ্যের মধ্যে প্রবেশ করিয়াছি—পুরাতন গুপ্তধনকে নূতন করিয়া লাভ করিবার ইচ্ছা । আমাদের মনে যে একটা ধিক্কারের প্রতিঘাত উপস্থিত হইয়াছে তাহাতেই আমাদিগকে আমাদের নিজের দিকে পুনরায় সবলে নিক্ষেপ করিয়াছে। প্রথম আক্ষেপে আমরা কিছু অন্ধভাবে আমাদের মাটি ধরিয়া পড়িয়াছি—আশা করা যায়, একদিন স্থিরভাবে অক্ষুন্ধচিত্তে ভালোমন্দ বিচারের সময় আসিবে এবং এই প্রতিঘাত হইতে যথার্থ গভীর শিক্ষা এবং স্থায়ী উন্নতি লাভ করিতে পারিব । একপ্রকারের কালি আছে যাহা কাগজের গায়ে কালক্রমে অদৃগু হইয়া যায় অবশেষে অগ্নির কাছে কাগজ ধরিলে পুনর্বার রেখায় রেখায় ফুটয় উঠে। পৃথিবীর অধিকাংশ সভ্যতা সেই কালিতে লেখা ; কালক্রমে লুপ্ত হইয়া যায় আবার শুভ দৈবক্রমে নবভ্যতার সংস্রবে নবজীবনের উত্তাপে তাহ পুনরায় ফুটিয়া উঠা অসম্ভব বোধ হয় না । আমরা তো সেইরূপ আশা করিয়া আছি। এবং সেই বিপুল আশায় উৎসাহিত হইয়া আমাদের সমুদয় প্রাচীন পুথিপত্রগুলি সেই উত্তাপের কাছে আনিয়া ধরিতেছি,—যদি পূর্ব অক্ষর ফুটয় উঠে তবেই পৃথিবীতে আমাদের গৌরব রক্ষিত হইতে পারে—নচেং বুদ্ধ ভারতের জরাজীর্ণ দেহ সভ্যতার জলস্ত চিতায় সমর্পণ করিয়া লোকাস্তর ও রূপান্তর প্রাপ্তি হওয়াই সদ্‌গতি । আমাদের মধ্যে সাধারণের সম্মানভাজন এক সম্প্রদায়ের লোক আছেন তাহারা বর্তমান সমস্তার সহজ একটা মীমাংসা করিতে চান । তাহাদের ভাবখানা এই : * ইরেজের সহিত আমাদের অনেকগুলি বাহ অমিল আছে। সেই বাহ অমিলই সর্বপ্রথম চক্ষে আঘাত করে এবং তাহা হইতেই বিজাতীয় বিদ্বেষের স্বত্রপাত হইয়া থাকে। অতএব বাঙ্ক অনৈক্যটা যথাসম্ভব দূর করা আবশ্যক। যে-সমস্ত আচারব্যবহার এবং দৃপ্ত চিরাভ্যাসক্রমে ইংরেজের সহজে শ্রদ্ধা আকর্ষণ করে সেইগুলি দেশে প্রবর্তন করা দেশের পক্ষে হিতজনক । বসনভূষণ ভাবভঙ্গি, এমন কি, ভাষাটা পর্বস্ত ইংরেজি হইয়া গেলে দুই জাতির মধ্যে মিলনসাধনের একটি প্রধান অন্তরায় চলিয়া যায় এবং আমাদের আত্মসম্মান রক্ষার একটি সহজ উপায় অবলম্বন করা হয়। আমার বিবেচনায় এ-কথা সম্পূর্ণ প্রদ্ধেয় নহে। বাহ অনৈক্য লোপ করিয়া দেওয়ার একটি মহৎ বিপদ এই যে, অনভিজ্ঞ দর্শকের মনে একটি মিথ্যা আশার সঞ্চার করিয়া দেওয়া হয় এবং সেই আশাটি রক্ষা করিবার জন্ত অলক্ষিতভাবে মিথ্যার শরণাপন্ন হইতে হয়। ইংরেজদিগকে জানাইয়া দেওয়া হয় আমরা তোমাদেরই মতে, এবং যেখানে অন্ততর কিছু বাহির হইয় পড়ে সেখানে তাড়াতাড়ি যেন তেন প্রকারে চাপাচুপি দিয়া কেলিতে ইচ্ছা করে। আডাম এবং ঈভ জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাইবার পূর্বে ষে সহজ বেশে