পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

! { রাজা প্রজা 8ፃ > মনে করে তাহার নারায়ণকেই অবজ্ঞাপূর্বক নিজের পক্ষে না লইয়া নিশ্চিন্ত থাকে। কিন্তু জয়লাভকেই যদি বাস্তবতার শেষ প্রমাণ বলিয়া জানি তবে নারায়ণ যতই একলা হ'ম এবং যতই ক্ষুদ্রমূর্তি ধরিয়া আসুন তিনিই জিতাইয়া দিবেন। আমার এত কথা বলিবার তাৎপর্য এই যে, যথার্থ বাস্তব যে কোন পক্ষে আছে তাহা সাময়িক উত্তেজনার প্রাবল্য বা লোকগণনার প্রাচুর্য হইতে স্থির করা যায় না। কোনো একটা কথা শাস্তরসাত্ৰিত বলিয়াই যে তাহ বাস্তবিকতায় পর্ব, এবং যাহা মাছুষকে এত বেগে তাড়না করে যে, পথ দেখিবার কোনো অবসর দেয় না তাহাই যে বাস্তবকে অধিক মান্ত করিয়া থাকে এ-কথা আমরা স্বীকার করিব না । “পথ ও পাথেয়” প্রবন্ধে আমি দুইটি কথার আলোচনা করিয়াছি। প্রথমত ভারতবর্ষের পক্ষে দেশহিতব্যাপারটা কী ? অর্থাং তাহ দেশী কাপড় পরা বা ইংরেজ তাড়ানো বা আর-কিছু ? দ্বিতীয়ত সেই হিতসাধন করিতে হইবে কেমন করিয়া । ভারতবর্ষের পক্ষে চরম হিত যে কী তাহা বুঝিবার বাধা যে কেবল আমরা নিজের উপস্থিত করিতেছি তাছা মহে বস্তুত তাহার সর্বপ্রধান বাধা আমাদের প্রতি ইংরেজের ব্যবহার । ইংরেজ কোনোমতেই আমাদের প্রকৃতিকে মানবপ্রকৃতি বলিয়া গণ্য করিতেই চায় না। তাছার মনে করে তাহারা যখন রাজা তপন জবাবদিহি কেবলমাত্র আমাদেরই, তাহাদের একেবারেই নাই। বাংলাদেশের একজন ভূতপূর্ব হৰ্তাকর্তা ভারতবর্ষের চাঞ্চল্য সম্বন্ধে যতকিছু উষ্মা প্রকাশ করিয়াছেন সমস্তই ভারতবাসীর প্রতি । তাহার মত এই যে কাগজগুলাকে উচ্ছেদ করে, সুরেন্দ্রবীভুজ্যে-বিপিনপালকে দমন করিয়া দাও । দেশকে ঠাণ্ডা করিবার এই একমাত্র উপায় যাহারা অনায়াসে কল্পনা ও নি:সংকোচে প্রচার করিতে পারে তাহদের মতো ব্যক্তি ষে আমাদের শাসনকর্তার পদে প্রতিষ্ঠিত ছিল ইহাই কি দেশের রক্ত গরম করিয়া তুলিবার পক্ষে অন্তত একটা প্রধান কারণ নহুে ? ইংরেজের গায়ে জোর আছে বলিয়াই মানবপ্রকৃতিকে মানিয়া চলা কি তাহার পক্ষে একেবারেই অনাবশ্বক ? ভারতবর্ষের চাঞ্চল্য নিবারণের পক্ষে ভারতের পেনশনভোগী এলিয়টের কি উহার জাতভাইকে একটি কথাও বলিবার নাই ? যাহাদের হাতে ক্ষমতা অজস্র তাহাদিগকেই আত্মসংবরণ করিতে হইবে না, আর যাহারা স্বভাবতই অক্ষম শমদমনিয়মসংযমের সমস্ত ব্যবস্থা কেবল তাহাদেরই জন্ত ! তিমি লিথিয়াছেন, ভারতবর্ষে ইংরেজের গায়ে যাহার হাত তোলে তাহারা যাহাতে কোনোমতেই নিষ্কৃতি না পায় সেজন্ত সতর্ক হইতে হইবে। আর যে-সকল ইংরেজ ভারতবর্ষীয়কে হত্যা করিয়া কেবলই দগু হইতে অব্যাহতি পাইয়া ব্রিটিশ বিচার সম্বন্ধে চিরস্থায়ী কলঙ্কের রেখা আগুন দিয়া ভারতবর্ষের চিত্তে দাগিয়া