পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমূহ (t): আমি ভাবিয়া দেখিলাম দুর্বল লোক জিতিয়াও হারে ; চমৎকার অস্ত্রচিকিৎসা হয় কিন্তু ক্ষীণরোগী চিকিৎসার দায়েই মারা পড়ে। তাহার পর হইতে এই কথা আমাকে বারংবার ভাবিতে হইয়াছে আর-কোনো দান দানই নহে, শক্তিদানই একমাত্র দান। একটা গল্প আছে, ছাগশিশু একবার ব্রহ্মার কাছে গিয়া কাদিয়া বলিয়াছিল,”ভগবান, তোমার পৃথিবীতে আমাকে সকলেই থাইতে চায় কেন ?” তাহাতে ব্ৰক্ষা উত্তর করিয়াছিলেন “বাপু, অন্তকে দোষ দিব কী, তোমার চেহারা দেখিলে আমারই থাইতে ইচ্ছা করে।” পৃথিবীতে অক্ষম বিচার পাইবে, রক্ষা পাইবে এমন ব্যবস্থা দেবতাই করিতে পারেন না । ভারতমন্ত্রসভা হইতে আরম্ভ করিয়া পার্লামেণ্ট পর্যন্ত মাথা খুড়িয়া মরিলেও ইহার যথার্থ প্রতিবিধান হইতে পারে না । সাধু ইচ্ছা এখানে অশক্ত। দুর্বলতার সংস্রবে আইন আপনি দুর্বল হইয় পড়ে, পুলিস আপনি বিভীষিকা হইয় উঠে। এবং র্যাহাকে রক্ষাকর্তা বলিয়া দোহাই পাড়ি স্বয়ং তিনিই পুলিসের ধর্মবাপ হইয়া দাড়ান। এদিকে প্রজার দুর্বলতা সংশোধন আমাদের কর্তৃপক্ষদের বর্তমান রাজনীতির বিরুদ্ধ । যিনি পুলিস-কমিশনে বসিয়া একদিন ধর্মবুদ্ধির জোরে পুলিসকে অত্যাচারী বলিয়া কটবাক্য বলেন তিনিই লাটের গদিতে বসিবা কর্মবুদ্ধির কোকে সেই পুলিসের বিষদাঁতে সামান্ত আঘাতটুকু লাগিলেই অসহ বেদনায় অশ্রুবর্ষণ করিতে থাকেন। তাহার কারণ আর-কিছুই নহে, কচি পাঠাটিকে অন্তের হাত হইতে রক্ষণযোগ্য করিতে গেলে পাছে সে তাহার নিজের চতুমুখের পক্ষেও কিছুমাত্র শক্ত হইয়া উঠে এ আশঙ্কা তিনি ছাড়িতে পারেন না । দেবী দুর্বলঘাতকাঃ । তাই দেশের জমিদারদিগকে বলিতেছি, হতভাগ্য রায়তদিগকে পরের হাত এবং নিজের হাত হইতে রক্ষা করিবার উপযুক্ত শিক্ষিত, সুস্থ ও শক্তিশালী করিয়া না তুলিলে কোনো ভালো আইন বা অমুকুল রাজশক্তির দ্বারা ইহার কদাচ রক্ষা পাইতে পারিবে না । ইহাদিগকে দেখিবামাত্র সকলেরই জিহবা লালারিত হইবে। এমনি করিয়া দেশের অধিকাংশ লোককেই যদি জমিদার, মহাজন, পুলিস, কানুনগো, আদালতের আমলা, যে ইচ্ছা সে অনায়াসেই মারিয়া যায় ও মারিতে পারে তবে দেশের লোককে মানুষ হইতে না শিখাইয়াই রাজা হইতে শিখাইব কী করিয়া ? i অবশেষে বর্তমানকালে আমাদের দেশের যে-সকল দৃঢ়নিষ্ঠ যুবক সমস্ত সংকট উপেক্ষা করিয়াও স্বদেশহিতের জন্ত স্বেচ্ছাত্ৰত ধারণ করিতেছেন অন্ত এই সভাস্থলে র্তাহারা সমস্ত বঙ্গদেশের আশীৰ্বাদ গ্রহণ করুন। রক্তবর্ণ প্রত্যুষে তোমরাই সর্বাগ্রে জাগিয়া উঠিয়া অনেক দ্বন্দ্রসংঘাত এবং অনেক দুঃখ গ্ৰহ করিলে। তোমাদের লেই