পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○"○8 \ রবীন্দ্র-রচনাবলী & নেকড়ে বাঘ মনে মনে বলেন, উচ্চ হ'ক নীচ হ’ক প্রভূত্বের স্বাদমাত্রই তোমাদিগকে দিতে চাহি না । তাহার পর মুখে বলেন, তোমরা অযোগ্য, ইণ্ডিয়া-ক্লাবে বৈঠক কর, তোমরা স্বদেশের প্রতিনিধি নও। বেসরকারি ইংরেজ-সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের বাগযুদ্ধ চলে। আমরা অনেক সময়' রাগের মুখে পরস্পরের প্রতি করুণবাক্য প্রয়োগ করি না। কিন্তু যাহারা ভারতশাসনকার্ষে রাজস্থানীয় এতদিন তাহার প্রজাসাধারণকে প্রকাস্তে রূঢ়ভাষায় অপমান করেন নাই । আমাদের প্রতি র্ত্যহাদের যে অত্যন্ত শ্রদ্ধা আছে তাহ না হইতে পারে, প্রচুর স্নেহ আছে এমন অভিমানও হয়তো না করিতে পারি কিন্তু তাহারা বাক্সংযম করিয়া গেছেন। তাহার একটা কারণ, তাহারা যে উচ্চপদের উন্নতশিখরে থাকেন সেখান হইতে একটি ছোটো কথা বর্ষণ করিলেও নিচের লোকের মাথার পক্ষে তাহা গুরুতর হইয় উঠে ; এরূপ অসমকক্ষ আক্রমণ বীরোচিত নহে। ইংরেজি ভাষায় যাহাকে cowardliness অর্থাৎ কাপুরুষতা বলে ইহাও তাহাই । আর-একটা কারণ এই যে, কথার কলহ ৰ্তাহার পক্ষে অনাবশ্যক এবং অযোগ্য । কারণ, তাহার হাতে ক্ষমতা আছে । শক্তস্ত ভূষণং ক্ষমা । সে-ক্ষমা কাজের ক্ষমা না হইলেও অস্তত বাক্যের ক্ষম। হওয়া উচিত । রাজনীতির হিসাবেও বাকসংযমের সার্থকতা আছে। রাজকাৰ্য সকল সময়ে প্রজার অমুকুলে যায় না। অতএব মাঝে মাঝে যখন কঠিন আইন বা অপ্রিয় করবৃদ্ধি প্রজার উপরে জারি করিতে হইবে তখন দুর্বাক্য দ্বারা সেটাকে আরও তিক্ত করিয়া তুলিলে রাজাপ্রজার মধ্যে একটা সংঘর্ষ অনাহূত বাড়াইয়া তোলা হয় । স্বাধীন ইংলণ্ডে পার্লামেণ্টে ভিন্ন ভিন্ন দলের মধ্যে বিবাদ-বচসা হইয়া থাকে ; কেহু কাহাকেও ছাড়িয়া কথা কহে না । কিন্তু সেখানে জমসাধারণে যাহা চায় রাজশক্তি তাহার বিরুদ্ধে যায় না। এইজন্য দেশ যে কী চায় তাহ নানা দলের আন্দোলনে সম্পূর্ণ আলোচিত হইয়া স্পষ্ট আকার ধারণ করে। এ-দেশে, আমরা যাহা প্রার্থনীয় জ্ঞান করি না তাহাও রাজা আমাদিগকে গিলিতে বাধ্য করেন—আমাদের মতামত-ইচ্ছানিচ্ছার দ্বারা রাজশাসন নিয়মিত হয় না । এখানে সম্পূর্ণ ই কর্তার ইচ্ছা কর্ম –সে-স্থলে গায়ে তিক্ত বড়িকে মিষ্ট আকারে গেলানে রাজনীতির নৈপুণ্য। রাজশাসনের পথকে যত সংঘাত-সংঘর্ষহীন করিয়া তোলা যায় ততই রাজ্যের পক্ষে এবং শাসনকর্তাদের পক্ষে