পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ २७S করিতেই হইবে । না যদি করেন, তবে পরপুচ্ছ বিকৃতভাবে আস্ফালনের প্রহসন সর্বত্রই ব্যাপ্ত হইয়া পড়িবে। এই লজ্জা হইতে, ইংরেজিয়ানার এই বিকার হইতে, স্বদেশকে রক্ষা করিবার জন্য আমরা কি সক্ষম নকলকারীকে সামুনয়ে অনুরোধ করিতে পারি না, কারণ, তাহারা সক্ষম, আর-সকলে অক্ষম। এমন-কি, অবস্থাবিশেষে তাহদের পুত্রপৌত্রেরাও অক্ষম হইয়া পড়িবে। তাহারা যখন ফিরিঙ্গিলীলার অধস্তন রসাতলের গলিতে গলিতে সমাজচ্যুত আবর্জনার মতো পড়িয়া থাকিবে, তখন কি র্যাঙ্কিনবিলাসীর প্রেতাত্ম। শাস্তিলাভ করিবে । দরিদ্র কোনোমতেই পরের নকল ভদ্ররকমে করিতে পারে না। নকল করিবার কাঠখড় বেশি । বাহির হইতে তাহার আয়োজন করিতে হয়। যাহাকে নকল করিতে হইবে, সর্বদা তাহার সংসর্গে থাকিতে হয়, দরিদ্রের পক্ষে সেইটেই সর্বাপেক্ষা কঠিন। স্বতরাং সে-অবস্থায় নকল করিতে হইলে, আদর্শভ্রষ্ট হইয়া কিন্তুতকিমাকার একটা ব্যাপার হইয় পড়ে। বাঙালির পক্ষে খাটাে ধুতি পর। লজ্জাকর নহে, কিন্তু খাটো প্যাণ্টলুন পর। লজ্জাজনক। কারণ, খাটো প্যাণ্টলুনে কেবল অসামর্থ্য বুঝায় না, তাহাতে পর সাজিবার যে-চেষ্টা যে-স্পর্ধা প্রকাশ পায়, তাহা দারিদ্র্যের সহিত কিছুতেই সুসংগত নহে। আজকাল ইংরেজি সাজ কিরূপ চলতি হইয়া আসিতেছে, এবং যতই চলতি হইতেছে ততই তাহ। কিরূপ বিকৃত হইয়া উঠিতেছে, দাৰ্জিলিঙের মতো জায়গায় আসিলে অল্পকালের মধ্যেই তাহ অনুভব করা যায়। বাঙালির দুরদৃষ্ট বাঙালিকে অনেক দুঃখ দিয়াছে, – পেটে প্লীহা, হাড়ের মধ্যে ম্যালেরিয়া, দেহে কৃশতা, চর্মে কালিমা, ভাণ্ডারে দৈন্য ; অবশেষে তাহাকে কি অদ্ভূত সাজে সাজাইয়া ব্যঙ্গ করিতে আরম্ভ করিবে । চিত্তদৌর্বল্যে যখন হাস্যকর করিয়া তোলে, তখন ধরণী দ্বিধা হওয়৷ ছাড়া লজ্জানিবারণের অণর উপায় থাকে না । আচারব্যবহার সাজসজ্জা উদ্ভিদের মতো, তাহাকে উপড়াইয়া আনিলে শুকাইয়া পচিয়া নষ্ট হইয়া যায়। বিলাতি বেশভূষা-অাদবকায়দার মাটি এখানে কোথায় । সে কোথা হইতে তাহার অভ্যস্ত রস আকর্ষণ করিয়া সজীব থাকিবে । ব্যক্তিবিশেষ খরচপত্র করিয়া কৃত্রিম উপায়ে মাটি আমদানি করিতে পারেন এবং দিনরাত সযত্নসচেতন থাকিয় তাহাকে কোনোমতে খাড়া রাখিতে পারেন । কিন্তু সে কেবল দুই-চারিজন শৌখিনের দ্বারাই সাধ্য। যাহাকে পালন করিতে, সজীব রাখিতে পরিবে না, তাহাকে ঘরের মধ্যে আনিয়া