পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©8 o রবীন্দ্র-রচনাবলী খোপাবিশিষ্ট মাটির পুতুল তাহদের হস্তদ্বয়ের অসম্পূর্ণতা ও পদদ্বয়ের সম্পূর্ণ অভাব লইয়া অম্লান বদনে আমার বাক্সর মধ্যে অন্তঃপুর রচনা করিয়া বসিয়া আছে। আমার কাগজপত্র কোথায় । কোথাও নাই । একটি বালিকা আমার হিজিবিজি কাগজগুলি বিষম ঘৃণাভরে ফেলিয়া দিয়া বাক্সটির মধ্যে পরম সমাদরে তাহার পুতুলের প্রতিষ্ঠা করিয়াছে। তাহীদের বিছানাপত্র, তাহদের কাপড়চোপড়, তাহদের ঘটিবাটি, তাহাদের মুখস্বাচ্ছন্দ্যের সামান্যতম উপকরণটুকু পর্যন্ত কিছুরই ক্রটি দেখিলাম না, কেবল আমার কাগজগুলিই নাই। বুড়ার খেলা বুড়ার পুতুলের জায়গা ছেলের খেল। ছেলের পুতুল অধিকার করিয়া বসিল। প্রত্যেক বৈয়াকরণের ঘরে এমনই একটি করিয়া মেয়ে থাকে যদি, পৃথিবী হইতে সে যদি তদ্ধিত প্রত্যয় ঘুচাইয় তাহার স্থানে এইরূপ ঘোরতর পৌত্তলিকতা প্রচার করিতে পারে, তবে শিশুদের পক্ষে পৃথিবী অনেকটা নিষ্কণ্টক হইয়া যায়। কিছু কিছু মনে আছে, তাহ লিখিতেছি। অ কিংবা অকারাস্ত বর্ণ উচ্চারণকালে মাঝে মাঝে ও কিংবা ওকারাস্ত হইয়া যায়। যেমন : অতি কলু ঘড়ি কল্য মরু দক্ষ ইত্যাদি। এরূপ স্থানে অ যে ও হইয়া যায়, তাহাকে হ্রস্ব-ও বলিলেও হয় । দেখা গিয়াছে অ কেবল স্থানবিশেষেই ও হইয়৷ যায়, সুতরাং ইহার একটা নিয়ম পাওয়া যায়। 曾 ১ম নিয়ম। । ই (হ্রস্ব অথবা দীর্ঘ ) অথবা উ (হ্রস্ব অথবা দীর্ঘ ) কিংবা ইকারান্ত উকারাস্ত ব্যঞ্জনবর্ণ পরে থাকিলে তাহার পূর্ববত অকারের উচ্চারণ ও হইবে ; যথা, অগ্নি অগ্রিম কপি তরু অঙ্গুলি অধুনা হতু ইত্যাদি। ২য়। যফলা-বিশিষ্ট ব্যঞ্জনবর্ণ পরে থাকিলে ‘অ’ ‘ও’ হইয়া যাইবে । এ নিয়ম প্রথম নিয়মের অন্তর্গত বলিলেও হয়, কারণ যফল৷ ই এবং অ-এর যোগমাত্র । উদাহরণ, গণ্য দস্ত্য লভ্য ইত্যাদি। ‘দস্ত’ এবং ‘দস্ত্য ন’ এই দুই শব্দের উচ্চারণের প্রভেদ লক্ষ্য করিয়া দেখো । ৩য়। ক্ষ পরে থাকিলে তৎপূর্ববর্তী ‘অ’ ‘ও’ হইয়া যায় ; যথা, অক্ষর কক্ষ লক্ষ পক্ষ ইত্যাদি । ক্ষ-র উচ্চারণ বোধ করি এককালে কতকটা ইকার-ঘেষা ছিল, তাই এই অক্ষরের নাম হইয়াছে ক্ষিয়। পূর্ববঙ্গের লোকেরা এই ক্ষ-র সঙ্গে যফলা যোগ করিয়া উচ্চারণ করেন, এমন-কি, ক্ষ-র পূর্বেও ঈষৎ ইকারের আভাস দেন। কলিকাতা অঞ্চলে “লক্ষ টাকা’ বলে, তাহারা বলেন ‘লৈক্ষ্য টাকা । ৪র্থ। ক্রিয়াপদে স্থলবিশেষে অকারের উচ্চারণ ‘ও’ হইয়া যায় ; যেমন, হ’লে ক’রলে