পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শব্দতত্ত্ব 8 o (t নিশপিশ আইচাই কাচুমাচু আবল-তাবল ইসফাস খুটিনাটি আগড়ম-বাগড়ম এবড়ো-খেবড়ো ছটফট তড়বড় হিজিবিজি ফষ্টিনাই অঁাকুবাকু হাবজা-গোবজা লটখটে তড়বড়ে ইত্যাদি । এই কথাগুলির অধিকাংশই আগাগোড়া অনির্দিষ্টভাব প্রকাশ করে। হাতপ। চোখমুখ কাপড়চোপড় লইয়া ছোটোখাটে। কত কী করাকে যে উসখুস করা বলে তাহা স্পষ্ট করিয়া-বলিতে গেলে হতাশ হইতে হয় ; কী কী বিশেষ কার্য করাকে যে আইঢাই করা বলে তাহ আমাদের মধ্যে কে ব্যাখ্যা করিয়া বলিতে পারেন। কঁচুমাচু করা কাহাকে বলে তাহা আমরা বেশ জানি, কিন্তু কাচুমাচু করার প্রক্রিয়াটি ষে কী তাহ সুস্পষ্ট ভাষায় বলিবার ভার লইতে পারি না। এ তো গেল অর্থহীন কথা ; কিন্তু যে-জোড়াকথার প্রথমাংশ অর্থবিশিষ্ট এবং দ্বিতীয়াংশ বিকৃতি, বাংলায় তাহার প্রধান কর্ণধার ট ব্যঞ্জনবর্ণটি । ইনি একেবারে সরকারীভাবে নিযুক্ত ; জলটল কথাটখা গিয়েটিয়ে কালোটালে৷ ইত্যাদি বিশেষ্য বিশেমণ ক্রিয়া কোথাও ইহার অনধিকার নাই। অভিধানে দেখা যায় ট অক্ষরের কথা বড়ে বেশি নাই, কিন্তু বেকার ব্যক্তিকে যেমন পৃথিবীমৃদ্ধ লোকের বেগার ঠেলিয়া বেড়াইতে হয় তেমনই বাংলাভাষায় কুঁড়েমিচর্চার যেখানে প্রয়োজন সেইখানেই ট-টাকে হাজরে দিতে হয়। আমরা পূর্বেই বলিয়াছি, মূলশব্দের বিকৃতিটাকে মূলের পশ্চাতে জুড়িয়া দিয়৷ বাংলাভাষা একটা স্পষ্ট অর্থের সঙ্গে অনেকখানি ঝাপসা অর্থ ইশারায় সারিয়া দেয় ; জলটল গানটান তাহার দৃষ্টান্ত। এই সরকারী ট-এর পরিবর্তে এক-এক সময় ফ একটিনি করিতে আসে, কিন্তু তাহতে একট। অবজ্ঞার ভাব আনে ; যদি বলি লুচিটুচি তবে লুচির সঙ্গে কচুরি নিমকি প্রভৃতি, অনেক উপাদেয় পদার্থ বুঝাইবার আটক নাই, কিন্তু লুচিফুচি বলিলে লুচির সঙ্গে লোভনীয়তার সম্পর্কমাত্র থাকে না। আর দুটি অক্ষর আছে, স এবং ম। বিশেষভাবে কেবল কয়েকটি শব্দেই ইহাদের প্রয়োগ হয় । ro... স-এর দৃষ্টান্ত : জো-সো জড়োসড়ো মোটাসোটা রকম-সকম ব্যামোস্তামো ব্যারাম-স্যারাম বোকাসোক নরম-সরম বুড়োস্কড়ে আটসাট গুটিয়ে-স্থটিয়ে বুঝেস্থঝে। ম-এর দৃষ্টান্ত : চটেমটে রেগেমেগে হিচকে-মিচকে সিটকে-মিটকে চটকে-মটকে চমকে-মমকে চেচিয়ে-মেচিয়ে আঁৎকে-মাৎকে জড়িয়ে-মড়িয়ে আঁচড়ে-মাচড়ে শুকিয়ে-মুকিয়ে কুঁচকে-মুচকে তেড়েমেড়ে এলোমেলে৷ খিটিমিটি হুড়মুড় ঝাঁকড়া-মাকড় কটোমটো । > ૨ | ૨૧