পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ 8(tఫి মধ্যস্থ হইয়া তখনকার প্রবল সমাজের সহিত উপস্থিতমতো রফা করিয়াছিলেন । কতকগুলি পরিবর্তন সাধন করিয়া সমাজকে পথ নির্দেশ করিয়াছিলেন। তবু সমাজ সেইখানেই থামিয়া রহিল। কিন্তু সে দোষ মুসলমান ধর্মের নহে, সে কেবল জ্ঞান বিদ্যা সভ্যতার অভাব । আমির আলি মহাশয়ের এই রচনা পাঠ করিয়া মনের মধ্যে একটা বিষাদের উদয় হয় । এককালে আদর্শ উচ্চতর ছিল, ক্রমশ তাহা বিকৃত হইয়া আসিয়াছে ; এবং এককালে কোনো মহাপুরুষ তৎসময়ের উপযোগী যে-সকল বিধান প্রচলিত করিয়া গিয়াছেন, বুদ্ধিচালনাপূর্বক সচেতনভাবে সমাজ তাহার অধিক আর এক পা অগ্রসর হয় নাই— এ কথা বর্তমান মুসলমানেরাও বলিতেছেন এবং বর্তমান হিন্দুরাও বলিতেছেন । গৌরব করিবার বেলাও এই কথা বলি, বিলাপ করিবার বেলাও এই কথা বলি । যেন আমাদের এসিয়ার মজ্জার মধ্যে সেই প্রাণক্রিয়ার শক্তি নাই যাহার দ্বারা সমাজ বাড়িয়া উঠে, যাহার অবিশ্রাম গতিতে সমাজ পুরাতন ত্যাগ ও নূতন গ্রহৎ করিয়া প্রতিনিয়তই আপনাকে সংস্কৃত করিয়া অগ্রসর হইতে পারে । যুরোপে এসিয়ায় প্রধান প্রভেদ এই যে, যুরোপে মনুষ্যের একটা গৌরব আছে, এসিয়াতে তাহা নাই। এই হেতু এসিয়ায় বড়ো লোককে মহৎ মনুষ্য বলে না, একেবারে দেবতা বলিয়া বসে ; কিন্তু যুরোপের কর্মপ্রধান দেশে প্রতিদিনই মনুষ্য নানা আকারে আপনার ক্ষমতা প্রকাশ করিতেছে, সেইজন্ত তাহারা আপনাকে নগণ্য, জীবনকে স্বপ্ন এবং জগৎকে মায়া মনে করিতে পারে না। প্রাচ্য খৃষ্টীয় ধর্মের প্রভাবে যুরোপীয়দের মনে মধ্যে মধ্যে বিপরীতভাব উপস্থিত হইলেও তাহ প্রবল কর্মের স্রোতে ভাসিয়া যায়। তাই সেখানে রাজার একাধিপত্য ভাঙিয়া আসে পুরোহিতের দেবত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ উপস্থিত হয় এবং গুরুবাক্যের অভ্রাস্তিকতার উপরে স্বাধীনবুদ্ধি জয়লাভ করে । আমাদের পূর্বাঞ্চলে প্রবল প্রকৃতির পদতলে অভিভূতভাবে বাস করিয়া প্রত্যেক মানুষ নিজের অসারতা ও ক্ষুদ্রতা অনুভব করে ; এইজন্ত কোনো মহৎ লোকের অভু্যদয় হইলে তাহাকে স্বশ্রেণী হইতে সম্পূর্ণ পৃথক করিয়া দেবতা-পদে স্থাপিত করে। তাহার পর হইতে তিনি যে-কয়টি কথা বলিয়া গিয়াছেন বসিয়া বসিয়া তাহার অক্ষর গণনা করিয়া জীবনযাপন করি ; তিনি সাময়িক অবস্থার উপযোগী যে-বিধান করিয়া গিয়াছেন তাহার রেখামাত্র লঙ্ঘন করা মহাপাতক জ্ঞান করিরা থাকি । পুনর্বার যুগান্তরে দ্বিতীয় মহৎলোক দেবতাভাবে আবিভূতি হইয়া সময়োচিত দ্বিতীয় পরিবর্তন প্রচলিত না করিলে আমাদের আর গতি নাই । আমরা যেন ডিম্ব হইতে ডিম্বাস্তরে