পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\S)8 Sq রবীন্দ্র-রচনাবলী নামেই বা কত ; মাঠে ইহার দাম কত ; জাহাজের ঘাটে ইহার দাম কত ; চাষীদের ঘর হইতে কিনিয়া একদম সমুদ্রপারে চালান করিতে পারিলে এক লফে কত লাভ হওয়া উচিত— কোথাও-বা। তাহা রেখা কাটিয়া, কোথাও-বা তাহা শতকরা হিসাবের অঙ্কে ছকিয়া, কোথাও বা অনুলোম-প্ৰণালীতে, কোথাও-বা প্ৰতিলোম-প্ৰণালীতে, লাল এবং কালো কালিতে, অতি পরিষ্কার অক্ষরে লম্বা কাগজের পাঁচ-সাত পৃষ্ঠা ভর্তি করিয়া যখন প্রসন্নর হাতে দিলাম তখন সে আমার পায়ের ধূলা লইতে যায় আর-কি । সে বলিল, “মনে বিশ্বাস ছিল, আমি এ-সব কিছু কিছু বুঝি, কিন্তু আজ হইতে, দাদা, তোমার সাকরেদ হইলাম।” আবার একটু প্ৰতিবাদও করিল। বলিল, “যে ধ্রুবাণি পরিত্যজ্য-মনে আছে তো ? কী জানি, হিসাবে ভুল থাকিতেও পারে।” আমার রেখ চড়িয়া গেল। ভুল যে নাই, কাগজে কাগজে তাহার অকাট্য প্রমাণ বাড়িয়া চলিল । লোকসান যত প্রকারের হইতে পারে সমস্তকে সার বাধিয়া খাড়া করিয়াও, মুনফাকে কোনোমতেই শতকরা বিশ-পচিশের নীচে নামাইতে পারা গেল না । এমনি করিয়া দোকানদারির সরু খাল বাহিয়া কারবারের সমুদ্রে গিয়া যখন পড়া গেল তখন যেন সেটা নিতান্ত আমারই জেন্দাবশত ঘটিল, এমনি একটা ভাব দেখা দিল । দায়িত্ব আমারই । একে দত্তবংশের সততা, তার উপরে সুদের লোভ ; গচ্ছিত টাকা ফাপিয়া উঠিল । মেয়েরা গহনা বেচিয়া টাকা দিতে লাগিল । কাজে প্ৰবেশ করিয়া আর দিশা পাই না । প্ল্যানে যেগুলো দিব্য লাল এবং কালো কালির রেখায় ভাগ করা, কাজের মধ্যে সে বিভাগ খুঁজিয়া পাওয়া দায় । আমার প্ল্যানের রসভঙ্গ হয়, তাই কাজে সুখ পাই না । অন্তরাত্মা স্পষ্ট বুঝিতে লাগিল, কাজ করিরার ক্ষমতা আমার নাই, অথচ সেটা কবুল করিবার ক্ষমতাও আমার নাই । কাজটা স্বভাবত প্ৰসন্নর হাতেই পড়িল, অথচ আমিই যে কারবারের হর্তাকর্তা বিধাতা, এ ছাড়া প্ৰসন্নর মুখে আর কথাই নাই । তার মতলব এবং আমার স্বাক্ষর, তার দক্ষতা এবং আমার পৈতৃক খ্যাতি, এই দুইয়ে মিলিয়া ব্যাবসাটা চার পা তুলিয়া যে কোন পথে ছুটিতেছে ঠাহর করিতেই পারিলাম না । দেখিতে দেখিতে এমন জায়গায় আসিয়া পড়িলাম। সেখানে তলও পাই না, কুলও দেখি না । তখন হাল ছাড়িয়া দিয়া যদি সত্য খবরটা ফাস করি তবে সততা রক্ষা হয়, কিন্তু সততার খ্যাতি রক্ষা হয় না । গচ্ছিত টাকার সুন্দ জোগাইতে লাগিলাম, কিন্তু সেটা মুনাফা হইতে নয়। কাজেই সুদের হার বাড়াইয়া গচ্ছিতের পরিমাণ বাড়াইতে থাকিলাম । কোনো-কিছুতেই খেয়াল নাই। হঠাৎ দেখি, অগস্ত্যের মতো এক গণ্ডুষে টাকার সমুদ্র শুষিয়া লইবার লোভ তারও আছে । আমি জানি না। কখন আমারই মনের মধ্য হইতে এই হাওয়াটা আমাদের সমস্ত পরিবারে বহিতে আরম্ভ করিয়াছে । আমাদের চাকর দাসী দরোয়ান পর্যন্ত আমাদের টাকা ফেলিতেছে। আমার স্ত্রীও আমাকে ধরিয়া পড়িল, সে কিছু কিছু গহনা বেচিয়া আমার কারবারে টাকা খাটাইবে । আমি ভৎসনা করিলাম, উপদেশ দিলাম। বলিলাম, লোভের মতো রিপু নাই।- স্ত্রীর bोका द्वाड्ने क्राष्ट्रि । আরো একজনের টাকা আমি লইতে পারি নাই । অনু একটি ছেলে লইয়া বিধবা হইয়াছে। যেমন কৃপণ তেমনি ধনী বলিয়া তার স্বামীর খ্যাতি ছিল । কেহ বলিত, দেড় লক্ষ টাকা তার জমা আছে ; কেহ বলিত আরো অনেক বেশি । লোকে বলিত, কৃপণতায় অনুতার স্বামীর সহধর্মিণী । আমি ভাবিতাম, তা হবেই তো। অনু তো তেমন শিক্ষা এবং সঙ্গ পায় নাই । এই টাকা কিছু খাটাইয়া দিবার জন্য সে আমাকে অনুরোধ করিয়া পঠাইয়াছিল। লোভ হইল,