পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

宁南邻顶 Q)ዒ (፩ সেও বুঝি এবার ঘুচাইলেন। কেবল উত্তরে হাওয়া নয়, এই-যে দেনা এও সেই লাংচু পাহাড় হইতে আসিয়া পৌঁছিতেছে ; এ তার স্বামীরই দক্ষিণ হাতের সম্পর্শ । সে হাসিমুখে বলিল, “ভয় কী, বাবা।” মাখন বলিলেন, “আমরা দাড়াই কোথায় ?” ষোড়শী বলিল, “নৈমিষারণ্যে চালা বেঁধে থাকব ।” "মাখন বুঝিলেন, ইহার সঙ্গে বিষয়ের আলোচনা বৃথা । তিনি বাহিরের ঘরে বসিয়া চুপ করিয়া তামাক টানিতে লাগিলেন । এমন সময়ে মোটর গাড়ি দরজার কাছে আসিয়া থামিল । সাহেবি কাপড়-পরা এক যুবা টপ করিয়া লাফাইয়া নামিয়া মাখনের ঘরে আসিয়া একটা অত্যন্ত অসম্পূৰ্ণ ভাবের নমস্কারের চেষ্টা করিয়া বলিল, “চিনতে পারছেন না ?” “এ কী ! বরদা নাকি ৷” বরদা জাহাজের লস্কর হইয়া আমেরিকায় গিয়াছিল । বারো বৎসর পরে সে আজ কোন এক কাপড়-কাচা কল-কোম্পানির ভ্রমণকারী এজেন্ট হইয়া ফিরিয়াছে। বাপকে বলিল, “আপনার যদি কাপড়-কাচা কলের দরকার থাকে খুব সস্তায় ক’রে দিতে পারি।” বলিয়া ছবি-আঁকা ক্যাটলগ পকেট হইতে বাহির করিল। ऊार्छ S७२8 পয়লা নম্বর আমি তামাকটা পর্যন্ত খাই নে । আমার এক অভ্ৰভেদী নেশা আছে, তারই আওতায় অন্য সকল নেশা একেবারে শিকড় পর্যন্ত শুকিয়ে মরে গেছে । সে আমার বই-পড়ার নেশা । আমার জীবনের মন্ত্রটা ছিল এই-- যাবজজীবেৎ নাই-বা জীবেৎ ঋণং কৃত্বা বহিং পঠেৎ । যাদের বেড়াবার শখ বেশি অথচ পথেয়ের অভাব, তাবা যেমন ক’রে টাইমটেবল পড়ে, অল্প বয়সে আর্থিক অসদ্ভাবের দিনে আমি তেমনি ক'রে বইয়ের ক্যাটালগ পড়তুম । আমার দাদার এক খুড়শ্বশুর বাংলা বই বেরবা-মাত্ৰ নিবিচারে কিনতেন এবং তার প্রধান অহংকার এই যে, সে বইয়ের একখানাও তার আজ পর্যন্ত খোওয়া যায় নি । বোধ হয় বাংলাদেশে এমন সৌভাগ্য। আর কারও ঘটে না । কারণ, ধন বল, আয়ু বল, অন্যমনস্ক ব্যক্তির ছাতা বল, সংসারে যতকিছু সারণশীল পদার্থ আছে বাংলা বই হচ্ছে সকলের চেয়ে সেরা । এর থেকে বোঝা যাবে, দাদার খুড়শ্বশুরের বইয়ের আলমারির চাবি দাদার খুড়শাশুড়ির পক্ষেও দুর্লভ ছিল । “দীন যথা রাজেন্দ্ৰসংগমে আমি যখন ছেলেবেলায় দাদার সঙ্গে তার শ্বশুরবাড়ি যেতুম ঐ রুদ্ধদ্বার আলমারিগুলোর দিকে তাকিয়ে সময় কাটিয়েছি। তখন আমার চক্ষুর জিভে জল এসেছে । এই বললেই যথেষ্ট হবে, ছেলেবেলা থেকেই এত অসম্ভব-রকম বেশি পড়েছি যে পাস করতে পারি নি। যতখানি কম পড়া পাস করার পক্ষে অত্যাবশ্যক, তার সময় আমার ছিল না । আমি ফেল-করা ছেলে বলে আমার একটা মস্ত সুবিধে এই যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাড়ায় বিদ্যার তোলা জলে আমার মান নয়- স্রোতের জলে অবগাহনই আমার অভ্যাস । আজকাল আমার কাছে অনেক বি. এ. এম. এ. এসে থাকে ; তারা যতই আধুনিক হােক, আজও তারা ভিক্টোরীয় যুগের নজরবন্দী হয়ে বসে আছে। তাদের বিদ্যার জগৎ টলেমির পৃথিবীর মতো, আঠারো-উনিশ শতাব্দীর সঙ্গে একেবারে যেন ইস্কু দিয়ে আঁটা ; বাংলাদেশের ছাত্রের -দল পুত্রপৌত্ৰাদিক্ৰমে তাকেই যেন