পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যের পথে 8V6 আছে বলেই মেনে নেয়, ব্যক্তিগত অভিরুচির মূল্যে তাকে যাচাই করে না, ব্যক্তিগত অনুরাগের আগ্রহে তাকে সাজিয়ে তোলে না। এই বৈজ্ঞানিক মনের প্রধান আনন্দ কৌতুহলে, আত্মীয়সম্বন্ধ-বন্ধনে নয় । আমি কী ইচ্ছে করি সেটা তার কাছে বড়ো নয়, আমাকে বাদ দিয়ে জিনিসটা স্বয়ং ঠিকমত কী সেইটেই বিচাৰ্য । আমাকে বাদ দিলে মোহের আয়োজন অনাবশ্যক । তাই এই বৈজ্ঞানিক যুগের কাব্যব্যবস্থায় যে-ব্যয়সংক্ষেপ চলছে তার মধ্যে সব চেয়ে প্রধান ছিাট পড়ল প্রসাধনে । ছন্দে বন্ধে ভাষায় অতিমাত্র বাছাবাছি চুকে যাবার পথে । সেটা সহজভাবে নয়, অতীত যুগের নেশা, কাটাবার জন্যে তাকে কোমর বেঁধে অস্বীকার করাটা হয়েছে প্ৰথা। পাছে অভ্যাসের টানে বাছাই-বুদ্ধি পাচিল ডিঙিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে এইজন্যে পাচিলের উপর রূঢ় কুশ্ৰীভাবে viet is Trois CD3 aper of frican : I am the greatest laugher of all বলছেন, “আমি সবার চেয়ে বড়ো হাসিয়ে, সূর্যের চেয়ে বড়ো, ওক গাছের চেয়ে, ব্যাঙের চেয়ে, WTGT (T is CDC " Than the frog and Apollo at 20 tie sits ric. G. NGr করে কবি মিঠে ক’রে সাজিয়ে কথা কইছে। ব্যাঙ না ব'লে যদি বলা হত সমুদ্র তা হলে এখনকার যুগ আপত্তি ক'রে বলতে পারত, ওটা দস্তুরমত কবিয়ানা । হতে পারে, কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি উলটো ছাদের দস্তুরমত কবিয়ানা হল ঐ ব্যাঙের কথা । অর্থাৎ, ওটা সহজ কলমের লেখা নয়, গায়ে পড়ে পা মাড়িয়ে দেওয়া । এইটেই হালের কায়দা । কিন্তু, কথা এই যে, ব্যাঙ জীবটা ভদ্র কবিতায় জল-আচরণীয় নয়, এ কথা মানবার দিন গেছে । সত্যের কোঠায় ব্যাঙ অ্যাপলোর চেয়ে বড়ো বৈ ছোটো নয় । আমিও ব্যাঙকে অবজ্ঞা করতে চাই নে। এমন-কি, যথাস্থানে কবিপ্ৰেয়সীর হাসির সঙ্গে ব্যাঙের মকমক হাসিকে এক পঙক্তিতেও বসানো যেতে পারে, প্ৰেয়সী আপত্তি করলেও । কিন্তু, অতিবড়ো বৈজ্ঞানিক সাম্যতত্ত্বেও যে-হাসি সূর্যের, যে-হাসি ওকবনস্পতির, যে-হাসি অ্যাপলোর, সে-হাসি ব্যাঙের নয়। এখানে ওকে আনা হয়েছে জোর ক’রে মোহ ভাঙবার জন্যে । মোহের আবরণ তুলে দিয়ে যেটা যা সেটাকে ঠিক তাই দেখতে হবে । উনবিংশ শতাব্দীতে মায়ার রঙে যেটা রঙিন ছিল আজ সেটা ফিকে হয়ে এসেছে ; সেই মিঠের আভাসমােত্র নিয়ে ক্ষুধা মেটে না, বস্তু চাই । ‘দ্রাণেন অর্ধভোজনং বললে প্ৰায় বারোআনা অত্যুক্তি করা হয় । একটি আধুনিক মেয়ে কবি গত যুগের সুন্দরীকে খুব স্পষ্ট ভাষায় যে-সম্ভাষণ করেছেন সেটাকে তর্জমা করে দিই৷ ”তর্জমায় মাধুরী সঞ্চার করলে বেখাপ হবে, চেষ্টাও সফল হবে না তুমি সুন্দরী এবং তুমি বাসি যেন পুরোনো একটা যাত্রার সুর বাজছে সেকেলে একটা সারিন্দি যন্ত্রে । কিংবা তুমি সাবেক আমলের বৈঠকখানায় যেন রেশমের আসবাব, তাতে রোদ পড়েছে। তোমার চোখে আয়ুহারা মুহুর্তের ঝরা গোলাপের পাপড়ি যাচ্ছে জীৰ্ণ হয়ে । তোমার প্রাণের গন্ধাটুকু অস্পষ্ট, ছড়িয়ে পড়া, ভঁাড়ের মধ্যে ঢেকে-রাখা মাথা ঘষা মসলার মতো তার বঁাজ । তোমার অতিকোমল সুরের আমেজ আমার লাগে ভালোতোমার ওই মিলে মিশে-যাওয়া রঙগুলির দিকে তাকিয়ে আমার মন ওঠে মেতে । আর আমার তেজ যেন টাকশালের নতুন পয়সা তোমার পায়ের কাছে তাকে দিলেম ফেলে ধুলো থেকে কুড়িয়ে নাও, তার ঝকমকানি দেখে হয়তো তোমার মজা লাগবে ।