পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যের পথে 8ዔ S যাবে কোথায় । কোনো কোনো গাছে ফুলে পাতায় কেবলই পোকা ধরে, আবার অনেক গাছে ধরে না- প্রথমটাকেই প্ৰাধান্য দেওয়াকেই কি বাস্তব-সাধনা বলে বাহাদুরি করতে হবে । একজন কবি একটি সম্রান্ত ভদ্রলোকের বর্ণনা করছেন রিচার্ড কোডি যখন শহরে যেতেন পায়ে-চলা পথের মানুষ আমরা তাকিয়ে থাকতুম তার দিকে । ভদ্র যাকে বলে, মাথা থেকে পা পর্যন্ত, ছিপছিপে যেন রাজপুত্র । , সাদাসিধে চালচলন, সাদাসিধে বেশভুষাকিন্তু যখন বলতেন ‘গুড় মনিং, আমাদের নাড়ী উঠত। চঞ্চল হয়ে । চলতেন যখন ঝলমল করত । ধনী ছিলেন অসম্ভব । ব্যবহারে প্রসাদগুণ ছিল চমৎকার । যা-কিছু ঐার চোখে পড়ত মনে হত, আহা, আমি যদি হতুমি ইনি । এ দিকে আমরা যখন মরছি খেটে খেটে, তাকিয়ে আছি কখন জ্বলবে আলো, ভোজনের পালায় মাংস জোটে না, গাল পাড়ছি মোটা রুটিকেএমন সময় একদিন শান্ত বসন্তের রাত্রে রিচার্ড কোডি গেলেন বাড়িতে, মাথার মধ্যে চালিয়ে দিলেন এক গুলি । এই কবিতার মধ্যে আধুনিকতারা ব্যঙ্গকটাক্ষ বা অট্টহাস্য নেই, বরঞ্চ কিছু করুণার আভাস আছে। কিন্তু, এর মধ্যে একটা নীতিকথা আছে, সেটা আধুনিক নীতি । সে হচ্ছে এই যে, যা সুস্থ বলে সুন্দর বলে প্ৰতীয়মান তার অন্তরে কোথাও একটা সাংঘাতিক রোগ হয়তো আছে। যাকে ধনী বলে মনে হয় তার পর্দার আড়ালে লুকিয়ে বসে আছে উপবাসী। যারা সেকেলে বৈরাগ্যপন্থী তারাও এই ভাবেই কথা বলেছেন । যারা বেঁচে আছে তাদের তারা মনে করিয়ে দেন, একদিন বঁাশের দোলায় চড়ে শ্মশানে যেতে হবে। য়ুরোপীয় সন্ন্যাসী উপদেষ্টারা বর্ণনা করেছেন মাটির নীচে গলিত দেহকে কেমন করে পোকায় খাচ্ছে। যে দেহকে সুন্দর বলে মনে করি সে যে অস্থিমাংস-রসরক্তের কদৰ্য সমাবেশ, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আমাদের চট্ৰক ভাঙিয়ে দেবার চেষ্টা নীতিশাস্ত্ৰে দেখা গেছে। বৈরাগ্যসাধনার পক্ষে প্রকৃষ্ট উপায়, এইরকম প্রত্যক্ষ বাস্তব্যের প্রতি বারে বারে অশ্রদ্ধা জমিয়ে দেওয়া । কিন্তু কবি তো। বৈরাগীর চেলা নয়, সে তো অনুরাগেরই পক্ষ নিতে এসেছে। কিন্তু, এই আধুনিক যুগ কি এমনি জরাজীর্ণ যে সেই কবিকেও লাগল শ্মশানের হাওয়া- এমন কথা সে খুশি হয়ে বলতে শুরু করেছে, যাকে মহৎ বলে মনে করি সে ঘুণে ধরা, যাকে সুন্দর বলে আদর করি তারই মধ্যে অস্পৃশ্যতা ? মন যাদের বুড়িয়ে গেছে তাদের মধ্যে বিশুদ্ধ স্বাভাবিকতার জোর নেই। সে মন অশুচি অসুস্থ হয়ে ওঠে। বিপরীত পন্থায় সে মন নিজের অসাড়তাকে দূর করতে চায়, গাজিয়ে-ওঠা পচা জিনিসের মতো যতী-কিছু বিকৃতি নিয়ে সে নিজেকে ঝাঝিয়ে তোলে লিজা এবং ঘূণা ত্যাগ করে তবে তার বলিরেখাগুলোর মধ্যে হাসির প্রবাহ বইতে পারে । ১ মূল কবিতাটি হাতের কাছে না থাকাতে স্মরণ করে তর্জমা করতে হল, কিছু ক্লািট ঘটতে পারে।