পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬৮ । রবীন্দ্র-রচনাবলী আমি বললুম, “একেবারেই না। কিছুদিন তো ওঁকে দেখছি, তার থেকেই । অসন্দিগ্ধ বুঝেছি, আপনি যা বলছেন তা খাটি সত্য ।” 象 “আজ এত অলুক্ষণে কথা তোমার মুখ দিয়ে বেরুচ্ছে কেন । জান নবীন, এই রকম যা-ত বলবার উপসর্গ ওর সম্প্রতি দেখা দিয়েছে।” “সব লক্ষণ শাস্ত হয়ে যাবে, তুমি চলো দেখি তোমার কাজে। নাড়ি আবার ফিরে আসবে। থামবে প্রলাপ-বকুনি ।” অধ্যাপক আমার দিকে চেয়ে বললেন, “তোমার কী পরামর্শ নবীন।” উনি পণ্ডিত মানুষ ব’লেই জিয়লজিস্টের বুদ্ধির পরে ওঁর এত শ্রদ্ধা। আমি একটুক্ষণ স্তন্ধ থেকে বললুম, “অচিরা দেবীর চেয়ে সত্য পরামর্শ আপনাকে কেউ দিতে পারবে না ।” 顧 অচিরা উঠে দাড়িয়ে পা ছুয়ে আমাকে প্রণাম করলে। আমি সংকুচিত হয়ে পিছু হঠে গেলুম। অচিরা বললে, “সংকোচ করবেন না, আপনার তুলনায় আমি কেউ নই। সে কথাটা একদিন স্পষ্ট হবে। এইখানেই শেষ বিদায় নিলুম। যাবার আগে আর কিন্তু দেখা হবে না।” অধ্যাপক আশ্চর্য তুয়ে বললেন, “সে কী কথা দিদি ।” "দাদু, তুমি অনেক কিছু জান, কিন্তু অনেক কিছু সম্বন্ধে তোমার চেয়ে আমার বুদ্ধি অনেক বেশি, সবিনয়ে এ কথাটা স্বীকার করে নিয়ে।” আমি পদধূলি নিয়ে প্রণাম করলুম অধ্যাপককে। তিনি আমাকে বুকে আলিঙ্গন ক’রে ধরে বললেন, “আমি জানি সামনে তোমার কীর্তির পথ প্রশস্ত।” এইখানে আমার ছোটো গল্প ফুরল। তার পরেকার কথা জিয়লজিস্টের । বাড়ি ফিরে গিয়ে কাজের নোট এবং রেকর্ডগুলো আবার খুললুম। মনে হঠাৎ খুব একটা আনন্দ জাগল— বুঝলুম একেই বলে মুক্তি। সন্ধ্যাবেলায় দিনের কাজ শেষ ক’রে বারান্দায় এসে বোধ হল— খাচী থেকে বেরিয়ে এসেছে পাখি, কিন্তু পায়ে আছে এক টুকরো শিকল । নড়তে চড়তে সেটা বাজে । 6. * * * wo অগ্রহায়ণ, ১৩৪৬