পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩০২ রবীন্দ্র-রচনাবলী রেবতী বললে, “বাসি, বাসি বাসি। কিন্তু এ ঘর থেকে তুমি যাও।” । হঠাৎ ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল পাঞ্জাবী প্রহরী ; ভৎপনার কণ্ঠে বললে, “মাল্লিজি, বহুত শরমকি বাং হেয়, আপ বাহার চল যাইয়ে।” রেবতী চেতনমনের অগোচরে ইলেকট্রিক ডাকঘড়িতে কখন চাপ দিয়েছিল। পাঞ্জাবী রেবতীকে বললে, “বাবুজি, বেইমানি মৎ করে।” * .. রেবতী নীলাকে জোর করে ঠেলে দিয়ে চৌকি থেকে উঠে পড়ল। দরোয়ান ফের নীলাকে বললে, “আপ বাহার চল যাইয়ে, নহি তো মনিবকে হুকুম তামিল করে গ৷ ” অর্থাৎ জোর করে অপমান করে বের করে দেবে। বাইরে যেতে যেতে নীল। বললে, “শুনছেন সার আইজাক নিউটন ?—কাল আমাদের বাড়িতে আপনার চায়ের নেমন্তয়, ঠিক চারটে পয়তাল্লিশ মিনিটের সময়। শুনতে পাচ্ছেন না? অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন ?” বলে একবার তার দিকে ফিরে দাড়ালে। r বাস্পাত্র কণ্ঠে উত্তর এল, “শুনেছি।” রাত-কাপড়ের ভিতর থেকে নীলার নিখুত দেহের গঠন ভাস্করের মূর্তির মতে৷ অপরূপ হয়ে ফুটে উঠল, রেবতী মুগ্ধ চোখে না দেখে থাকতে পারল না। নীলা চলে গেল। রেবতী টেবিলের উপর মুখ রেখে পড়ে রইল। এমন আশ্চর্ষ সৌন্দর্য সে কল্পনা করতে পারে না। একটা কোন বৈদ্যুত বর্ষণ প্রবেশ করেছে ওর শিরার মধ্যে, চকিত হয়ে বেড়াচ্ছে অগ্নিধারায়। হাতের মুঠে শক্ত করে রেবতী কেবলই নিজেকে বলাতে লাগল, কাল চায়ের নিমন্ত্রণে যাবে না। খুব শক্ত শপথ করবার চেষ্টা করতে চায়, মুখ দিয়ে বেরয় না। ব্লটিঙের উপর লিখল, যাব না, যাব না, যাব না। হঠাৎ দেখলে তার টেবিলে একটা ঘন লাল রঙের রুমাল পড়ে আছে, কোণে নাম সেলাই করা নীলা । মুখের উপর চেপে ধরল রুমাল, গন্ধে মগজ উঠল ভরে, একটা নেশা সির সির করে ছড়িয়ে গেল সর্বাঙ্গে । * †. নীল। আবার ঘরের মধ্যে এল। বললে, “একটা কাজ আছে ভুলে গিয়েছিলুম।” দরোয়ান রুখতে গেল। নীল বললে, “ভয় নেই তোমার, চুরি করতে আসি নি। একটা কেবল সই চাই। জাগানী ক্লাবের প্রেসিডেন্ট করব তোমাকে— তোমার নাম আছে দেশ জুড়ে ।” অত্যন্ত সংকুচিত হয়ে রেবতী বললে, “ও ক্লাবের আমি তো কিছুই জানি নে।” “কিছুই তো জানবার দরকার নেই। এইটুকু জানলেই হবে ব্রজেন্দ্রবাৰু এই