পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বপরিচয় । evసి অল্প কিছুদিন হল কেন্থিজের এক তরুণ পণ্ডিত লিটলটন সৌরজগৎ-স্থষ্টি সম্বন্ধে একটি নূতন মত প্রচার করেছেন। পূর্বেই বলেছি আকাশে অনেক জোড়ানক্ষত্র পরস্পরকে প্রদক্ষিণ করছে। এর মতে আমাদের স্বর্ষেরও একটি জুড়ি ছিল। ঘুরতে ঘুরতে আর-একটা ভবঘুরে জ্যোতিষ্ক এসে এই অহচরের গায়ে পড়ে ধাক্কা মেরে তাকে অনেক দূরে ছিটকে ফেলে দিয়ে চলে গেল। চলে যেতে যেতে পরস্পর আকর্ষণের জোরে মস্ত বড়ো একটা জলন্ত বাম্পের টানা স্বত্র বের হয়ে এসেছিল ; তারই ভিতর মিশিয়ে গিয়েছিল এদের উভয়ের উপাদানসামগ্রী । এই বাষ্পস্থত্রের যে অংশ সূর্যের প্রবল টানে আটকা পড়ে গেল সেই বন্দী-কর গ্যাসের থেকেই জন্মেছে আমাদের গ্রহমণ্ডলী। এর আয়তনে ছোটাে ব’লেই ঠাণ্ড হয়ে আসতে দেরি করলে না ; তাপ কমতে কমতে গ্যাসের টুকরোগুলো প্রথমে হল তরল, তারপর আরও ঠাও হতেই তাদের শক্ত হয়ে ওঠার দিন এল। . n একথা মনে রেখে ঐ সকল আন্দাজি মতকে নিশ্চিত প্রমাণের মধ্যে ধরে নেওয় চলবে না । বলা আবশ্বক, স্বর্ষের সমস্তটাই গ্যাস। পৃথিবীর যেসব উপাদান মাটি ধাতু পাথরে শক্ত, তাদের সমস্তই কুর্যের মধ্যে প্রচও উত্তাপে আছে গ্যাসের অবস্থায়। বর্ণলিপিষন্ত্রের রেখাপাত থেকে তার প্রমাণ হয়ে গেছে। কিরীটিকার অতি স্বল্প গ্যাস-আবরণের কথা পূর্বেই বলা হয়েছে। সেই স্তর পেরিয়ে যত ভিতরে যাওয়া যাবে, ততই দেখা দেবে ঘনতর গ্যাস এবং উষ্ণতর তাপ । সূর্যের উপরিতলের তাপমাত্র প্রায় দশহাজার ফারেনহাইট ডিগ্রির মাপে, অবশেষে নিচে নামতে নামতে এমন স্তরে পৌছব যেখানে ঠাসা গ্যাসের আর স্বচ্ছত নেই। এই জায়গায় তাপমাত্রা এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ ডিগ্রির চেয়ে বেশি। অবশেষে কেন্দ্রেগিয়ে পাওয়া যাবে প্রায় সাত কোটি বিশ লক্ষ ডিগ্রির তাপ । সেখানে সুর্যের দেহবস্তু কঠিন লোহা পাথরের চেয়ে অনেক বেশি ঘন অথচ গ্যাসধর্মী। J স্বর্ষের দূরত্বের কথাটা অঙ্ক দিয়ে বলবার চেষ্টা না করে একটা কাল্পনিক ব্যাখ্যা দিয়ে বলা যাক। আমাদের দেহে যেসব অনুভূতি ঘটছে আমাদের কাছে তার খবরচালাচালির ব্যবস্থা করছে অসংখ্য স্পর্শনাড়ী। এই নাড়ীগুলি আমাদের শরীর ব্যাপ্ত ক’রে মিলেছে মস্তিষ্কে গিয়ে । টেলিগ্রাফের তারের মতো তাদের যোগে মস্তিষ্কে খবর আসে, আমরা জানতে পারি কোথায় পিপড়ে কামড়াল, জিবে ষে খাদ্য লাগল। সেটা মিষ্টি, যে দুধের বাটি হাতে তুললুম সে গরম। আমাদের শরীরটা হাওড়া থেকে বধর্মানের মতো প্রশস্ত নয়, তাই খবর পেতে দেরি লাগে না। তবু অতি অল্প