ԳV9V) রবীন্দ্র-রচনাবলী র্তাহার সঙ্গে সঙ্গে চলিল, সেটা ছাড়িয়া দিলে রঘুপতির মুখের উপর হইতে নাকের সমুন্নত মহিমা একেবারে সমুলে লোপ হইবার সম্ভাবনা । সৈন্যদের হাস্যে কানন ধ্বনিত হইতে লাগিল। মধ্যাহে আজ যুদ্ধ করিতে হইবে, সকালে তাই রঘুপতিকে লইয়া তাহাদের ভারি খেলা পড়িয়া গেল। খেলার সাধ মিটিলে পর ব্রাহ্মণকে সুজার শিবিরে লইয়া গেল । সুজাকে দেখিয়া রঘুপতি সেলাম করিলেন না। তিনি দেবতা ও স্ববৰ্ণ ছাড়া আর কাহারও কাছে কখনো মাথা নত করেন নাই। মাথা তুলিয়া দাড়াইয়া রহিলেন ; হাত তুলিয়া বলিলেন, “শাহেন-শার জয় হউক ৷” সুজা মদের পেয়ালা লইয়া সভাসদ-সমেত বসিয়াছিলেন ; আলস্যবিজড়িত স্বরে নিতান্ত উপেক্ষাভরে কহিলেন, “কী, ব্যাপার কী !” সৈন্যেরা কহিল, “জনাব, শত্রুপক্ষের চর গোপনে আমাদের বলাবল জানিতে আসিয়াছিল ; আমরা সুজা কহিলেন, “আচ্ছা আচ্ছা ! বেচারা দেখিতে আসিয়াছে, উহাকে ভালো করিয়া সমস্ত দেখাইয়া ছাড়িয়া দাও । দেশে গিয়া গল্প করিবে ।” রঘুপতি বদ হিন্দুস্থানিতে কহিলেন, “সরকারের অধীনে আমি কর্ম প্রার্থনা করি।” যে বাতাস করিতেছিল, সে দ্বিগুণ জোরে বাতাস করিতে লাগিল । দারা তাহার পুত্র সুলেমানকে রাজা জয়সিংহের অধীনে সুজার আক্রমণ প্রতিরোধ করিতে পাঠাইয়াছেন । তাহাদের বৃহৎ সৈন্যদল নিকটবতী হইয়াছে, সংবাদ আসিয়াছে। তাই বিজয়গড়ের হাতে কেল্লা এবং সরকারি খাজনা সমৰ্পণ করিবার প্রস্তাব লইয়া বিজয়গড়ের অধিপতি বিক্রমসিংহের নিকট দূত গিয়াছিল। বিক্রমসিংহ সেই দূতমুখে বলিয়া পাঠাইলেন, “আমি কেবল দিল্লীশ্বর শাজাহান এবং জগদীশ্বর ভবানীপতিকে জানি- সুজা কে ? আমি তাহাকে জানি না।” সুজা জড়িত স্বরে কহিলেন, “ভারি বেআদব ! নাহিক আবার লড়াই করিতে হইবে । ভারি হাঙ্গাম !” রঘুপতি এই সমস্ত শুনিতে পাইলেন । সৈন্যদের হাত এড়াইবামাত্র বিজয়গড়ের দিকে চলিয়া (क८ ।। একবিংশ পরিচ্ছেদ পাহাড়ের উপর বিজয়গড় । বিজয়গড়ের অরণ্য গড়ের কাছাকাছি গিয়া শেষ হইয়াছে। অরণ্য হইতে বাহির হইয়া রঘুপতি সহসা দেখিলেন, দীর্ঘ পাষাণদুর্গ যেন নীল আকাশে হেলান দিয়া দাড়াইয় আছে। অরণ্য যেমন তাহার সহস্র তরুজালে প্রচ্ছন্ন, দুর্গ তেমনি আপনার পাষাণের মধ্যে আপনি রুদ্ধ। অরণ্য সাবধানী, দুর্গ সতর্ক। অরণ্য ব্যান্ত্রের মতো গুড়ি মারিয়া লেজ পাকাইয়া বসিয়া আছে, দুৰ্গ সিংহের মতো কেশর ফুলাইয়া ঘাড় বাকাইয়া দাড়াইয়া আছে। অরণ্য মাটিতে কান পাতিয়া শুনিতেছে, দুৰ্গ আকাশে মাথা তুলিয়া দেখিতেছে। রঘুপতি অরণ্য হইতে বাহির হইবামাত্র দুর্গপ্রাকারের উপরে সৈন্যরা সচকিত হইয়া উঠিল । শৃঙ্গ বাজিয়া উঠিল। দুর্গ যেন সহসা সিংহনাদ করিয়া দাঁত নখ মেলিয়া ভুকুটি করিয়া দাড়াইল। রঘুপতি পইতা দেখাইয়া হাত তুলিয়া ইঙ্গিত করিতে লাগিলেন। সৈন্যেরা সতর্ক হইয়া দাড়াইয়া রহিল । রঘুপতি যখন দুর্গপ্রাচীরের কাছাকাছি গেলেন তখন সৈন্যেরা জিজ্ঞাসা করিয়া উঠিল, “তুমি কে ? রঘুপতি বলিলেন, “আমি ব্ৰাহ্মণ, অতিথি ।” দুৰ্গাধিপতি বিক্রমসিংহ পরম ধর্মনিষ্ঠ। দেবতা ব্ৰাহ্মণ ও অতিথি -সেবায় নিযুক্ত। পইতা থাকিলে