পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

brQS রবীন্দ্র-রচনাবলী যা হােক ভদ্রনাম ধারণ করে অসহায়কে অপমান করতে যার সংকোচ বোধ হয় না, তাকে এত কথা বলাই বাহুল্য ; বিশেষত যে ব্যক্তি অপমান সহ্য করে দুর্বল হলেও তাকে যখন অন্তরের সঙ্গে ঘূণা कों द6 शांकों यीश की । কিন্তু একটা কথা আমি ভালো বুঝতে পারি নে। ইংলন্ডে তো তোমাদের এত বিশ্বহিতৈষিণী মেয়ে আছেন, তারা সভাসমিতি করে নিতান্ত অসম্পৰ্কীয় কিংবা দূরসম্পর্কীয় মানবজাতির প্রতিও দূর থেকে দয়া প্ৰকাশ করেন । এই হতভাগ্য দেশে সেই ইংরেজের ঘর থেকে কি যথেষ্ট পরিমাণে মেয়ে আসেন। না র্যারা উক্ত বাহুল্য করুণরসের কিয়দংশ উপস্থিত ক্ষেত্রে ব্যয় করে মনোভার কিঞ্চিৎ লাঘব করে যেতে পারেন । বরঞ্চ পুরুষমানুষে দয়ার দৃষ্টান্ত দেখেছি। কিন্তু তোমাদের মেয়েরা এখানে কেবল নাচগান করেন, সুযোগমতে বিবাহ করেন এবং কথোপকথনকালে সুচারু নাসিকার সুকুমার অগ্রভাগটুকু কুঞ্চিত করে আমাদের স্বজাতীয়ের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করেন । জানি না, কী অভিপ্ৰায়ে বিধাতা আমাদের ভারতবাসীকে তোমাদের ললনাদের স্নায়ুতন্ত্রের ঠিক উপযোগী করে সৃজন করেন so | যাই হােক, স্বাগত উক্তি যত ভালোই হােক স্টেজ ছাড়া আর কোথাও শ্রোতাদের কর্ণগোচর হয় না । তা ছাড়া যে কথাগুলো আক্ষেপবশত মনের মধ্যে উদয় হয়েছিল সেগুলো যে এই গোফওআলা। পালোয়ানের বিশেষ কিছু হৃদয়ংগম হত এমন আমার বোধ হয় না। এ দিকে, বুদ্ধি যখন বেড়ে উঠল। চোর তখন পালিয়েছে- তারা পূর্বপ্রসঙ্গ ছেড়ে অন্য কথায় গিয়ে পড়েছে। মনের খেদে কেবল নিজেকেই ধিককার দিতে লাগলুম। ১৫ অক্টোবর । জাহাজে আমার একটি ইংরেজ বন্ধু জুটেছে। লোকটাকে লাগছে ভালো । অল্প বয়স, মন খুলে কথা কয়, কারো সঙ্গে বড়ো মেশে না, আমার সঙ্গে খুব চট করে বনে গেছে । আমার বিবেচনায় শেষটাই সব চেয়ে মহৎ গুণ । এ জাহাজে তিনটি অস্ট্রেলিয়ান কুমারী আছেন— তাদের সঙ্গেও আমার আলাপ হয়েছে। বেশ সহজ সরল রকমের লোক, কোনোপ্রকার অতিরিক্ত ঝােজ নেই। আমার নববন্ধু এদের প্রশংসাস্বরূপে <Gi, "They are not at all smart I" (vert, a Grigs SKR 3&GSG, CNG (M2N RR st বড়োই smart— বডেড চোখমুখের খেলা, বডেড নাকে মুখে কথা, বডেড খরতার হাসি, বডেড চোখাচোখা জবাব- কারো কারো লাগে ভালো, কিন্তু শান্তিপ্ৰিয় সামান্য লোকের পক্ষে নিতান্ত শ্রান্তিজনক । ১৬ অক্টোবর । আজ জাহাজে দুটি ছোটাে ছোটাে নাট্যাভিনয় হয়ে গেল। দলের মধ্যে একটি আজ অনেক রাত্রে নিরালায় একলা দাড়িয়ে জাহাজের কাটরা ধরে সমুদ্রের দিকে চেয়ে অন্যমনস্কভাবে গুনগুন করে একটা দিশি রাগিণী ধরেছিলুম। তখন দেখতে পেলুম অনেকদিন ইংরেজি গান গেয়ে গেয়ে মনের ভিতরটা যেন অতৃপ্ত হয়ে ছিল । হঠাৎ এই বাংলা সুরাটা পিপাসার জলের মতো বোধ হল । আমি দেখলুম। সেই সুরটি সমুদ্রের উপর অন্ধকারের মধ্যে যেরকম প্রসারিত হল, এমন আর কোনো সুর কোথাও পাওয়া যায় বলে আমার মনে হয় না। আমার কাছে ইংরেজি গানের সঙ্গে আমাদের গানের এই প্ৰধান প্ৰভেদ ঠেকে যে, ইংরেজি সংগীত মানবজগতের সংগীত আর আমাদের সংগীত প্ৰকাণ্ড নির্জন প্রকৃতির অনির্দিষ্ট অনির্বচনীয় বিষাদ-গভীর সংগীত । কানাড়া টােড়ি প্রভৃতি বড়ো বড়ো রাগিণীর মধ্যে যে গান্তীর্য এবং কাতরতা আছে সে যেন কোনো ব্যক্তিবিশেষের নয়- সে যেন অকূল অসীমের প্রান্তবর্তী এই সঙ্গিহীন বিশ্বজগতের । ১৭ অক্টোবর । বিকালের দিকে জাহাজ মাল্টা দ্বীপে পৌছল। কঠিন দুর্গপ্রাকারে বেষ্টিত অট্টালিকাখচিত তরুগুল্মহীন শহর এই শ্যামল পৃথিবীর একটা অংশ যেন ব্যাধি হয়ে কঠিন হয়ে গেছে। দূর থেকে দেখে নাবিতে ইচ্ছে করে না। অবশেষে আমার নববন্ধুর অনুরোধে তীর সঙ্গে একত্রে নেবে পড়া গেল। সমুদ্রতীর থেকে সুরঙ্গপথের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ঘাটের মতো উঠেছে, তারই সোপান