পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিত্রাণ rs8૭ দেখব শুধু মুখখানি, শুনব দুটি মধুর বাণী, আড়াল থেকে হাসি দেখে চলে যাব দেশাস্তরে । স্বরম। দাদামশায়, কারো মুখে হাসি দেখবার জন্যে তোমাকে কোনোদিন আড়ালে থাকতে হয় নি । p אי উদয় । তুমি যাই বল, হাসি দেখে দেশান্তরে যেতে ইচ্ছে হয় এমন হাসি আমরা কেউ হাসি নে । স্বরম। তুমি যে এলে আমরা কোনো খবর জানতুম না। বসন্ত। দিদি, এ সংসারে প্রত্যক্ষ এসে না পৌছলে, কে আসবে কে না আসবে তার ঠিক খবরটি তো পাওয়া যায় না । স্বরম। ওটা শঙ্করাচার্যের মতে কথা হল। তোমার ওই হাসিমুখে এমন কথা মানায় না । বসন্ত । সে কথা মিথ্যে বলিস নি ভাই | সংসার অনিত্য, জীবন অনিশ্চিত, এসব কথা ঘোর মিথ্যে । তোদের মুখ যখনই দেখি তখনই সংসার নিত্য, তখনই জীবন চিরদিনের, তা যেদিন মরি। আর যেদিন বাচি । স্বরম। যে অমৃত-মুখের কথা বললে সেটিকে তোমার তৃষিত চক্ষু খুঁজে বেড়াচ্ছে, আমি কি বুঝতে পারছি নে ? বসন্ত । ওটা ভাই, মিথ্যে অভিমানের কথা বললি, মহাদেব বুকের মধ্যে রেখেছেন অন্নপূর্ণাকে, আর মাথার উপরে রেখেছেন গঙ্গাকে— কাউকেই তার ছাড়লে একদণ্ড চলে না— তার প্রাণের অন্নজল দুইই সমান চাই। স্বরম। আর আমার ঠাকরুনদিদি ! এখানে এসেই বুঝি ভুললে ? বসন্ত । তিনি তো আমার চাদ । বিধাতা আমার কপালে লিখে দিয়েছেন। র্তাকে ভুলেও ভোলবার জো নেই। স্বরম। তিনি চাদের মতোই চুপ করে থাকেন বটে, আমি বোধ হয় গঙ্গার মতোই মুখরা। * } বসন্ত। সে কথা অস্বীকার করতে পারি নে। চক্ষু বুজে ওই স্নিগ্ধ কলকণ্ঠ নিয়তই মনে মনে শুনতে পাই । স্বরমা। এত স্তুতিবাক্যও চতুর্মুখ তোমার এক মুখে জোগান কী করে ? বসন্ত । সে আমার এই বাগবাদিনীর গুণে—বিধিরও নয়, আমারও নয়।