পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O8 o রবীন্দ্র-রচনাবলী নীলুদাদা, রাগ করিয়ো না, আমার যাহা-কিছু ছিল লিখিয়া পড়িয়া দিয়াছি। আমার কিছুতেই প্রয়োজন নাই । নীলকান্ত অস্থির হইয়া উঠিয়া কহিল— অঁ্যা, করিয়াছ কী ! যখন দলিলের খসড়া পড়িয়া দেখিল সত্যই আমি আমার সমস্ত স্বত্ব ত্যাগ করিয়াছি তখন নীলকাস্তের ক্রোধের সীমা রছিল না। তাহার প্রভুর মৃত্যুর পর হইতে আমার ওই ‘হক’ বাচানোই তাহার জীবনের একমাত্র অবলম্বন ছিল । তাহার সমস্ত বুদ্ধি সমস্ত শক্তি ইহাতেই অবিশ্রাম নিযুক্ত ছিল । এ লইয়া মামলা-মকদ্দমা, উকিলবাড়ি-হাটাইটি, আইন খুজিয়া বাহির করা, ইহাতেই সে স্বখ পাইয়াছে— এমন-কি, তাহার নিজের ঘরের কাজ দেখিবারও সময় ছিল না । সেই ‘হক যখন নির্বোধ মেয়েমানুষের কলমের এক আঁচড়েই উড়িয়া গেল তখন নীলকাস্তকে শাস্ত করা অসম্ভব হইয়া উঠিল । সে কহিল— যাক, এখানকার সঙ্গে আমার সমস্ত সম্বন্ধ চুকিল, আমি চলিলাম । অবশেষে নীলুদাদা এমন করিয়া রাগ করিয়া আমার কাছ হইতে বিদায় হইয়া যাইবে শ্বশুরবাড়ির ভাগ্যে এই কি আমার শেষ লিখন ছিল ! আমি তাহাকে অনেক মিনতি করিয়া ডাকিয়! বলিলাম– দাদা, আমার উপর রাগ করিয়ো না । আমার কিছু জমানে টাকা আছে তাছা হইতে তোমাকে এই পাচ শো টাকা দিতেছি— তোমার ছেলের বউ যেদিন আসিবে সেইদিন আমার আশীৰ্বাদ জানাইয়া এক্ট টাকা হইতে তাহার গহনা গড়াইয়া দিয়ো । নীলকাস্ত কহিল— আমার আর টাকায় প্রয়োজন নাই । আমার মনিবের সবই যখন গেল তখন ও পাচ শো টাকা লইয়া আমার মুখ হইবে না । ও থাক । এই বলিয়া আমার স্বামীর শেষ অকৃত্রিম বন্ধু আমাকে ছাড়িয়া চলিয়া গেল ! আমি ঠাকুর-ঘরে আশ্রয় লইলাম। আমার দেবররা বলিল— তুমি তীর্থবালে যাও । আমি কহিলাম— আমার শ্বশুরের ভিটাই আমার তীর্থ, আর আমার ঠাকুর যেখানে আছে সেইখানেই আমার আশ্রয়। কিন্তু আমি যে বাড়ির কোনো অংশ অধিকার করিয়া থাকি তাছাও তাহাদের পক্ষে অসঙ্ক হইতে লাগিল । তাহারা ইতিমধ্যেই আমাদের বাড়িতে