পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন sa: কিছু পাওয়া। তাই তো মানুষ এমন সাহসে সেই অনন্ত জগতের বিধাতাকে ডেকেছে ‘পিতা নোহসি, তুমি আমারই পিতা, তুমি আমারই ঘরের। এ ডাক সত্য ডাক ; কিন্তু, এই ডাকই মানুষ একেবারে মিথ্যা করে তোলে যখন এই ছোটো আনন্তের সঙ্গে সঙ্গেই বড়ে অনন্তকে ডাক না দেয়। তখন তাকে আমরা মা ব’লে পিতা বলে কেবলমাত্র আবদার করি, আর সাধন করবার কিছু থাকে না ; যেটুকু সাধনা সেও কৃত্রিম সাধন হয়। তখন তাকে পিতা বলে আমরা যুদ্ধে জয়লাভ করতে চাই, মকদ্দমায় ফল লাভ করতে চাই, অন্যায় করে তার শাস্তি থেকে নিস্কৃতি পেতে চাই । কিন্তু, এ তে কেবলমাত্র নিজের সাধনাকে সহজ করবার জন্য, ফাকি দিয়ে আপন দুর্বলতাকে লালন করবার জন্যে, তাকে পিতা বলা নয়। সেইজন্যেই বলা হয়েছে ; পিতা নোহসি পিতা নো বোধি। তুমি যে পিতা এই বোধকে আমার উদবোধিত করতে থাকে। এ বোধ তো সহজ বোধ নয়, ঘরের কোণে এ বোধকে বেঁধে রেখে তো চুপ করে পড়ে থাকবার নয়। আমাদের বোধের বন্ধন মোচন করতে করতে এই পিতার বোধটিকে ঘর থেকে ঘরে, দেশ থেকে দেশে, সমস্ত মানুষের মধ্যে নিত্য প্রসারিত করে দিতে হবে । আমাদের জ্ঞান প্রেম কর্মকে বিস্তীর্ণ করে দিয়ে ডাকতে হবে “পিতা’— সে ডাক সমস্ত অন্যায়ের উপরে বেজে উঠবে, সে ডাক মঙ্গলের দুর্গম পথে বিপদের মুখে আমাদের আহবান করে ধ্বনিত হবে। পিতা নো বোধি ! নমস্তেহস্তু ! পিতার বোধকে উদবোধিত করে – যেন আমাদের নমস্কারকে সত্য করতে পারি, যেন আমাদের প্রতিদিনের পূজায়, আমাদের ব্যবসায়ে, সমাজের কাজে, আমাদের পিতার বোধ জাগ্রত হয়ে পিতাকে নমস্কার সত্য ‘ হয়ে ওঠে । মানুষের যে পরম নমস্কারটি তার যাত্রাপথের দুই ধারে তার নানা কল্যাণকীর্তির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে চলেছে, সেই সমগ্র মানবের সমস্ত কালের চিরসাধনার নরস্কারটিকে আজ আমাদের উৎসবদেবতার চরণে নিবেদন করতে এসেছি। সে নমস্কার পরমানন্দের নমস্কার, সে নমস্কার পরম দুঃখের নমস্কার। নমঃ শস্তবায় চ ময়োভবায় চ, নমঃ শিবায় চ শিবতরায় চ। তুমি স্থখরূপে আনন্দকর, তোমাকে নমস্কার! তুমি দুঃখরূপে কল্যাণকর, তোমাকে নমস্কার! তুমি কল্যাণ, তোমাকে নমস্কার! তুমি নব নবতর কল্যাণ, তোমাকে নমস্কার। ১১ মাঘ ১৩২০ ফাল্গুন ১৩২০