পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88tr রবীন্দ্র-রচনাবলী তুমি কোন জিনিস রাধছ, এ দুটাে প্রশ্ন একই নয়, অথচ এক বানানে দুই প্রয়োজন সারতে গেলে বানানের খরচ বাঁচিয়ে প্রয়োজনের বিঘ্ন ঘটানো হবে। যদি দুই “কি’’-এর জন্যে দুই ইকারের বরাদ্দ করতে নিতান্তই নারাজ থাক তা হলে হাইফেন ছাড়া উপায় নেই। দৃষ্টান্ত : “তুমি কি রাধছ' এবং ‘তুমি কি-রাধছ।” এই পর্যন্ত থাক।” 6. Rš Ņses R আমার প্রফ-সংশোধনপ্রণালী দেখলেই বুঝতে পারবে। আমি নিরঞ্জনের উপাসক-চিহ্নের অকারণ উৎপাত সইতে পারি নে। কেউ কেউ যাকে ইলেক বলে (কোন ভাষা থেকে পেলে জানি নে) তার ঔদ্ধত্য হাস্যকর অথচ দুঃসহ। অসমাপিকা ক'রে বলে প্রভৃতিতে দরকার হতে পারে কিন্তু ‘হোসে’ ‘কেঁদে’-তে একেবারেই দরকার নেই। করেছে বলেছে’-তে ইলেক চড়িয়ে পাঠকের চােখে খোচা দিয়ে কী পুণ্য অর্জন করবে জানি নে। করবে চলবে প্রভৃতি স্বতঃসম্পূর্ণ শব্দগুলো কী অপরাধ করেছে যে, ইলেককে শিরোধাৰ্য করতে তারা বাধ্য হবে। যার”-“তার” উপর ইলেক চড়াও নি বলে তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। পাছে হল (লাঙল) এবং হল (হইল) শব্দে অর্থ নিয়ে ফৌজদারি হয়। সেজন্যে ইলেকের বাঁকা বুড়ো আঙুল না দেখিয়ে অকপটচিত্তে হােলো লিখতে দোষ কী । এ ক্ষেত্রে ঐ ইলেকের ইশারাটার কী মানে তা সকলের তো জানা নেই। হোলো শব্দে দুটাে ওকার ধ্বনি আছে-এক ইলেক কি ঐ দুটাে অবলাকেই অন্তঃপুরে অবগুষ্ঠিত করেছেন : হতে ক্রিয়াপদ যে-অর্থ স্বভাবতই বহন করে তা ছাড়া আর কোনো অর্থ তার পরে আরোপ করা: বঙ্গভাষায় সম্ভব কি না জানি নে অথচ ঐ ভালোমানুষ দাগীরূপে চিহ্নিত করা ওর কোন নিয়তির নির্দেশ। স্তম্ভপরে পালঙ্কপরে প্রভৃতি শব্দ কানে শোনবার সময় কোনো বাঙালির ছেলে ইলেকের অভাবে বিপন্ন হয় না, পড়বার সময়েও স্তম্ভ পালঙ্ক প্রভৃতি শব্দকে দিন মুহুর্ত প্রভৃতি কালার্থক শব্দ বলে কোনো প্রকৃতিস্থ লোকের ভুল করবার আশঙ্কা নেই। চলবার’ ‘বলবার’ ‘মরবার” ‘ধরবার” শব্দগুলি বিকল্পে দ্বিতীয় কোনো অর্থ নিয়ে কারবার করে না। তবু তাদের সাধুত্ব রক্ষার জন্যে লেজগুটোনো ফোটার ছাপ কেন। তোমার প্রফে দেখলুম হয়ে’ শব্দটা বিনা চিহ্নে সমাজে চলে গেল। অথচ ল’য়ে” কথাটাকে ইলেক দিয়ে লজ্ঞিত করেছি। পাছে সংগীতের লয় শব্দটার অধিকারভেদ নিয়ে মামলা বাধে এইজন্যে। কিন্তু সে রকম সুদূর সম্ভাবনা আছে কি। লাখে যদি একটা সম্ভাবনা থাকে তারি জন্যে কি হাজার হাজার নিরপরাধকে দাগ দেবে। কোন জায়গায় এরকম বিপদ ঘটতে পারে তার নমুনা আমাকে পাঠিয়ে দিয়ে। যেখানে যুক্ত ক্রিয়াপদে অসমাপিকা থাকে। সেখানে তার অসমাপ্তি সম্বন্ধে কোনো দ্বিধা থাকতে পারে না। যেমন, বলে ফেলো, করে দাও ইত্যাদি। অবশ্য করে দাও মানে হাতে দাও হতেও পারে। কিন্তু সমগ্ৰ বাক্যের যোগে সে রকম অর্থবিকল্প হয় না- যেমন কাজ করে দাও। বলে ফেলো’ কথাটাকে খণ্ডিত করে দেখলে আর-একটা মানে কল্পনা করা যায়, কেউ-একজন বলে ফেলো’। কিন্তু আমরা তো সব প্রথমভাগ বর্ণপরিচয়ের টুকরো কথার ব্যবসায়ী নই। তুমি বলে যাও” কথাটা স্বতই স্পষ্ট, কেবল

  • পরে দেখা গেছে, কি এবং কী-এর বিশেষ প্রয়োগ পুরোনো বাংলা পুঁথিতেও প্রচলিত আছে।