পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যঙ্গকৌতুক Atఫిలి রক্ষা করিয়া বলিলেন, ভগবন, সায়ান্স নামক একটা দানব অত্যস্ত জুলুম আরম্ভ করিয়াছে। ইহার নিকটে বৃত্র প্রভৃতি প্রাচীন অস্থরদিগকে গণ্যই করি না।’ 핵 বৃদ্ধ পিতামহ মনে মনে হাসিলেন ; ভাবিলেন, কোনোমতে মানে মানে তাহার হাত হইতে উদ্ধার পাইয়াছ, এখন তাহাকে গণ্য না করিলেও চলে। কিন্তু তখন যে নাকালট হইয়াছিলে সে বেশ মনে আছে। কিন্তু সে কথা আর উত্থাপন না করিয়া গম্ভীরভাবে চারিটি মস্তক নাড়িয়া কহিলেন, “অবশ্য অবশ্য ।” # স্বরগুরু বৃহস্পতি কহিলেন, ‘আর্য, শক্রটাকে তত ডরাই না, কিন্তু মিত্রদের উপজবে অতিষ্ঠ হইয়াছি। এতদিন আমরা ছিলাম মানুষের হৃদয়লোকে বিশ্বাসের স্বৰ্গধামে ; এখন তাহারা সায়ান্সের সহিত গোপনে সন্ধিস্থাপনপূর্বক সেখান হইতে নির্বাসিত করিয়া আমাদিগকে মাথার খুলির এক কোণে অত্যন্ত শুষ্ক সংকীর্ণ জায়গায় একটুখানি স্থান দিতে চায়। সেখানে একফোটা বিশ্বাসের অমৃত নাই। বলে, দেখো, তোমাদের কত গৌরব বাড়িল ৷ ছিলে অজ্ঞানান্ধ হৃদয়গহবরে, এখন উঠিলে মস্তিষ্কস্তৃতজালিত জ্ঞানালোকিত মস্তকচুড়ায়। ভাগ্যে আমরা কয়জন বুদ্ধিমান ছিলাম, নতুবা স্বর্গে মর্তে কোথাও তোমাদের স্থান হইত না । আমরা সকলের কাছে প্রমাণ করিয়াছি যে, তোমরা আর কোথাও যদি না থাক, নিদেন আমাদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মধ্যে আছ । প্রতিবাদ করিয়া সেখান হইতে তোমাদিগকে বিচলিত করে এমন বুদ্ধিমান এখনো কেহ জন্মগ্রহণ করে নাই। বিষ্ণুর মীন কূৰ্ম বরাহ প্রভৃতি অবতারগুলিকে আমরা এভোলুশন থিওরি বলিয়া প্রচার করিয়াছি। দেবতাদের উদ্ধারের জন্য আমরা এত প্রাণপণ চেষ্টা করিতেছি। ‘ভগবন, যথার্থ আন্তরিক ভক্তি কখনোই নিজের দেবতাকে লইয়া এরূপ ছেন্ত্রে ভুলাইরার চেষ্টা করে না। দেব চতুরানন, এতকাল দেবতা ছিলাম, কেবল মাঝে মাঝে দৈত্যদের উপদ্রবে স্বৰ্গছাড়া হইয়াছি, কিন্তু এপর্যন্ত আমাদিগকে কেহ এভোলুশন থিওরি করিয়া দেয় নাই। প্রভু, তুমি যদি আমাদিগকে স্বষ্টি করিয়া থাক তুমি জান আমরা কী, কিন্তু আজকাল তোমার অপেক্ষ যাহারা কিঞ্চিং বেশি শিখিয়াছে তাহদের হাত হইতে আমাদিগকে রক্ষা করে । বড়ো আশা দিয়াছিলে তোমার দেবতার অমর, কিন্তু এইভাবে যদি কিছুদিন চলে, আমাদের মানব বন্ধুরা যদি সংঘাতিক স্নেহভরে আরও কিছুকাল আমাদের ব্যাখ্যা করিতে থাকেন, তবে সে আশা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হইবে। বৃহস্পতির মুখে এই-সমস্ত সংবাদ শ্রবণ করিয়া পিতামহ ব্ৰহ্মা আর উত্তর করিতে পারিলেন না, চারিটি শুভ্র মস্তক নত করিয়া চিস্তিতভাবে বসিয়া রহিলেন ।