পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

; f f অমরনাথের কথা প্রথম পরিচ্ছেদ , এই অন্ধ পুষ্পনারী কি মোহিনী জানে, তাহ বলিতে পারি না। চক্ষে কটাক্ষ নাই, অথচ আমার মত সন্ন্যাসীকেও মোহিত করিল। আমি মনে করিয়াছিলাম, লবঙ্গলতার পর আর কখন কাহাকে ভাল বাসিব না। মনুষের সকলই অনর্থক দম্ভ। অন্য দূরে থাক, সহজেই এই অন্ধ পুষ্পনারী কর্তৃক মোহিত হইলাম। মনে করিয়াছিলাম—এ জীবন অমাবস্যার রাত্রির স্বরূপ—অন্ধকারেই কাটিবে—সহস৷ চন্দ্রোদয় হইল। মনে করিয়াছিলাম—এ জীবনসিন্ধু সাতারিয়াই আমাকে পার হইতে হইবে—সহসা সম্মুখে সুবর্ণসেতু দেখিলাম। মনে করিয়াছিলাম, এ মরুভূমি চিরকাল এমনই দগ্ধক্ষেত্র থাকিবে, রজনী সহসা সেখানে নন্দনকানন আনিয়া বসাইল ! আমার এ . মুখের আর সীমা নাই। চিরকাল যে অন্ধকার গুহামধ্যে বাস করিয়াছে, সহসা সে যদি এই সূৰ্য্যকিরণসমুজ্জল তরুপল্লবকুসুমস্থশোভিত মনুষ্যলোকে স্থাপিত হয়, তাহার যে আনন্দ, আমার সেই আনন্দ । যে চিরকাল পরাধীন পরপীড়িত দাসাচুদাস ছিল, সে যদি হঠাৎ সৰ্ব্বেশ্বর সাৰ্ব্বভৌম হয়, তাহার যে আনন্দ, আমার সেই আনন্দ । রজনীর মত যে জন্মান্ধ, হঠাৎ তাহার চক্ষু ফুটিলে যে আনন্দ, রজনীকে ভাল বাসিয়া আমার সেই আনন্দ । কিন্তু এ আনন্দে পরিণামে কি হইবে, তাহ বলিতে পারি না। আমি চোর । আমার পিঠে, আগুনের অক্ষরে লেখা আছে যে, আমি চোর। যে দিন রজনী সেই অক্ষরে হাত দিয়া, জিজ্ঞাসা করিবে, এ কিসের দাগ—আমি তাহাকে কি বলিব । বলিব কি যে, ও কিছু নহে ? সে অন্ধ, কিছু জানিতে পারিবে না। কিন্তু যাহাকে অবলম্বন করিয়া আমি সংসারে সুখী হইতে চাহিতেছি—তাহাকে আবার প্রতারণা করিব । যে পারে, সে করুক, আমি যখন পারিয়াছি, তখন ইহার অপেক্ষাও গুরুতর ফুস্কার্য্য করিয়াছি—করিয়া ফলভোগ করিয়াছি—আর কেন ? আমি লবঙ্গলতার কাছে বলিয়াছিলাম, সকল কথা রজনীকে বলিব, কিন্তু বলিতে মুখ ফুটে নাই। এখন বলিব ।