পাতা:রানী শরৎ সুন্দরীর জীবন-চরিত - গিরীশচন্দ্র লাহিড়ী.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৪ মহারাণী শরং সুন্দরীর জীবন-চরিত । অভ্যাস করিয়াছিলেন। সেই বাল্যজীবনেই পিতার অতিথিশালা দেখিয়া সংসারকে, পরমপিতার একটা অতিথিশালা বলিয়া স্থির করিয়াছিলেন।* তিনি যেন বুঝিয়াছিলেন, এই সংসার অতিথিশালায় তিনিও একজন অতিথি । এখানে কোনও অতিথি, দুই চারি দিন থাকিতে পায়, আবার কেহ'ব, এক মুহূৰ্ত্তও বিশ্রাম করিতে পারে না । সামান্ত অতিথিশালার প্রবাসীগণ, অনেকে আপনার পরিপাকশক্তি না বুঝিয়া, গুরুতর আহারের সদ্যফলভোগ করে। শয়ন উপবেশনের স্থান লইয়। পরস্পর বিবাদ করে। সংসাররূপ অতিথিশালাতেও সেইরূপ দৃষ্টান্ত । কেহ পরিণাম না বুঝিয়া পাপরূপ বিষভোজনে, দুঃখের জালায় ছটফট করে ; আত্মগ্লানি ও অনুতাপের অগ্নিতে জীবস্তে দগ্ধ হয়। ভূমি লইয়া, সামান্ত সামান্ত বস্তু লইয়া, পরস্পরে কলহ করিয়া সৰ্ব্বস্বাস্ত হইতেছে। পুত্র কলত্রের মমত্বে মুগ্ধ হইয়া, তাহদের সুখের জন্ত, আপনার পাশব বৃত্তি চরিতার্থ জন্য, পরের সৰ্ব্বনাশ করিতেছে । কিন্তু, একবার চিস্তা করে না, যে, এই শস্ত্য পুর্ণ বসুন্ধরা চিরকাল যেমন আছে, পরেও তাহাই থাকিবে ; ইহার একটা পরমাণুতেও, কাহার স্বত্ব নাই। মনুষ্য

  • তিনি বিধবা হইবার পর, সময়ে সময়ে যে সকল কথা বলিতেন, তাহাতেই এই সমস্ত বিষয় বুঝা যাই ত একদিন, কোন এক বিষয় উপলক্ষে, একজন সঙ্গিনীকে বলিয়াছিলেন, যে,—“আমি শিশুকালে ভাল খাব, ভাল পরিব বলিয়া, বাবাকে । একদিনও বিরক্ত করি নাই ; তখন হইতেই সংসারকে ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখিয়াছি । যোগী সন্ন্যাসীদিগের কিম্ব অন্তের নিকট, যখন নানা তীর্থের কথা, তীর্থ মহিমার কথা শুনিতাম, তখনই আমার সেই সেই স্থান দেখিতে ইচ্ছা হইত। বাবার অতিথিশালা দেখিয়া, সেখানে নানা অবস্থার লোক দেখিয়া, সময় সময় সংসারের প্রতি আমার বড়ই অশ্রদ্ধা হইত। কিন্তু কেন হইত, তখন তত বুঝিতাম না । এখন বুঝিতেছি, আমার দুঃখময় অদৃষ্টই আমাকে ঐক্কপ প্রবৃত্তি দিত। সে সময়ে অভ্যাস না হইলে, এত দুঃখ সহিতে পারিতাম না। আর সেই অতিথিশালায় দুঃখীর অৰস্থা দেখিয়া, আমার মনে হইত, আমি বড় হইয়' নিজের শক্তিমত আতিথ্য করিব । কিন্তু, এখন দেখিতেছি, দুঃখীর দুঃখ মোচন, আমার ক্ষুদ্র শক্তির অসাধ ।