পাতা:রানী শরৎ সুন্দরীর জীবন-চরিত - গিরীশচন্দ্র লাহিড়ী.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

.. মহারাণী শরৎমুন্দরীর জীবন-চরিত। "4 ה যোগেন্দ্রনারায়ণ, শিক্ষাগার হইতে বিদ্যার পরিবর্তে সুরাকে সঙ্গে লইয়। যদিচ ভগ্ন হৃদয়ে আসিয়াছিলেন, তথাপি, তাহার পরদুঃখকাতরতা, দ্যায়পরতা ও কঠোর অধ্যবসায়শীলতার উন্নতি ব্যতীত অবনতি হয় নাই। যোগেন্দ্রনারায়ণ, সম্পত্তির কার্য্যভার গ্রহণ করিয়াই, ভীষণ কাৰ্য্যক্ষেত্রে প্রবেশ করিলেন । নীলকরদিগের অত্যাচার দমনই র্তাহার প্রথম ও প্রধানতম কাৰ্য্য হইল * তাহার নিকটে দলে দলে প্রজ। আসিয়া অশ্রু বিসর্জন করিতে করিতে নীলকরের ভয়ঙ্কর অত্যাচার কাহিনী কহিয়া আশ্রয় ভিক্ষা চাহিতে লাগিল । তিনি প্রথমে মিষ্ট কথায় কুঠির কৰ্ম্মচারীদিগকে সৎপথে ব্যবসায় চালনার জন্ত উপদেশ করিলেন ; কিন্তু, কেহই সে কথায় কর্ণপাত করিল না। বরং তাহার, যোগেন্দ্রনারায়ণকে প্রচুর অর্থের প্রলোভন দিয়া পুনরায় ইজারার প্রস্তাব করিলেন। কিন্তু, যোগেন্দ্রনারায়ণ, সেরূপ অপরিণামদর্শী অর্থপিশাচ ছিলেন না, তিনি ঘৃণার সহিত ইজারার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিলেন । অবশেষে তিনি দেখিলেন, যে, তাহার সম্পত্তির এক চতুর্থাংশ সাহেব

  • এই সময়ে বঙ্গদেশে নীলকরের অত্যাচার শেষ সীমায় উপস্থিত হইয়াছিল, বলিয়া ধ্বংস কালও আসন্ন হইয়াছিল । সে সময়ে দেশময় কিরূপ কালানল জ্বলিয়া ছিল, তাহা নীল বিদ্রোহের ইতিহাস পাঠ করিলেই জানা যায় । এখনও তাহার প্রত্যক্ষ দশ ভূক্তভোগী অনেকেই জীবিত আছেন। তাহাদিগের মুখে অত্যাচারের বিবরণ শুনিতে আরম্ভ করিলে নৃসংশতার প্রত্যক্ষ মূৰ্ত্তি সিরাজউদ্দৌলাকে দেবতার আসন দিতে ইচ্ছা হয়। কুঠিয়ালগণ, স্বাধীন অবাধ বাণিজ্যের দায় দিয়া প্রবল প্রতাপ স্থায় পরায়ণ বৃটিশ সিংহের সম্মুখে কিরূপ ভীষণতম নৃশংসতা, কিরূপ যথেচ্ছাচার করিয়াছিলেন, তাহার সামান্ত মাত্র চিত্র, মহাত্মা দীনবন্ধু মিত্র, “নীলদর্পণে” দেখাইয়াছেন । পাদরী, মহাত্মা লং সাহেব, তাহার ইংরাজিতে অনুবাদ করিয়া বৃটিশ আইনের সর্বশক্তিমত্তায় কারাগারে নিক্ষিপ্ত হইয়াছিলেন। হিন্দু প্রেটিয়টের উদ্যমশীল যুবক সম্পাদক মহাত্মা হরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রেটিয়টের মুখে নীলকরের দৌরাত্ম্য বর্ণন করিয়া কঠোর পরিশ্রমে, নানা দুশ্চিস্তায় জীবন বিসর্জন করিয়াছিলেন ।