পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২০
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গ-সমাজ।

 ১৮১৫ খ্রীষ্টাব্দে কলিকাতার বর্তমান বেচু চাটুর্য্যের স্ট্রীট নামক গলিতে, স্বীয় পিতামহ দেওয়ান রামপ্রসাদ সিংহের ভবনে ইহার জন্ম হয়। ইহার পিতার নাম গোবিন্দ চন্দ্র ঘোষ। পৈতৃক নিবাস বাগাটা গ্রামে। ঐ গ্রাম হুগলী জেলার অন্তর্গত প্রসিদ্ধ ত্রিবেণী তীর্থের সন্নিকটে অবস্থিত। তাঁহার পিতামহ কলিকাতার কিং হামিল্টন কোম্পানির (King Hamilton & Co) আফিসে কর্ম্ম করিতেন। কলিকাতার চীনাবাজারে তাঁহার পিতার একখানি দোকান ছিল। সেখানে তিনি সামান্য ব্যবসায় বাণিজ্য করিতেন।

 রামগোপালের শৈশবকালের শিক্ষা সম্বন্ধে অধিক কিছু জানি না। সে সম্বন্ধে দুই প্রকার জনশ্রুতি আছে। এক জনশ্রুতিতে বলে, তিনি প্রথমে শারবরণ (Sherburne) সাহেবের স্কুলে ইংরাজী শিক্ষা আরম্ভ করিয়াছিলেন। ঐ সময়ে একটা ঘটনা ঘটে, যাহাতে তিনি হিন্দুকালেজে ভর্ত্তি হইতে পান। সে ঘটনাট এই, তাঁহার কোনও স্বসম্পৰ্কীয়া বালিকার সহিত হিন্দুকালেজের অন্যতম ছাত্র, ও পরবর্ত্তী সময়ের ডিরোজিওর শিষ্যদলের অন্ততম সভ্য হরচন্দ্র ঘোষের বিবাহ হয়। বালক হরচন্দ্র অপেক্ষাকৃত অল্পবয়স্ক রামগোপালের মেধার পরিচয় পাইয়া, তাঁহার দিকে আকৃষ্ট হন; এবং তাঁহাকে হিন্দুকালেজে ভর্ত্তি হইবার জন্য উৎসাহিত করেন। রামগোপাল তাঁহার উৎসাহে উৎসাহিত হইয়া স্বীয় পিতাকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তোলেন। তাঁহার পিতার এরূপ অর্থ সামর্থ্য ছিল না যে তিনি হিন্দুকালেজের বেতন দিয়া পুত্রকে পড়াইতে পারেন। এই সময়ে মিষ্টর রজার্স (Mr. Rogers) নামক কিং হামিণ্টন কোম্পানির আপীসের একজন কর্ম্মচারী শিশু রামগোপালের বেতন দিতে স্বীকৃত হন। তাহাই ভরসা করিয়া তাঁহাকে হিলুকালেজে ভর্ত্তি করিয়া দেওয়া হয়। অপর জনশ্রুতি এই যে রজার্স সাহেবের সাহায্যে তিনি প্রথম হইতেই হিন্দুকালেজে পড়িতে আরম্ব করেন।

 যাহা হউক তাঁহাকে অবিক দিন বেতন দিয়া পড়িতে হয় নাই। তাঁহার পাঠে মনোযোগ, ও অসাধারণ মেধা দেখিয়া মহামতি হেয়ার তাঁহাকে ত্বরায় অবৈতনিক ছাত্রদলে প্রবিষ্ট করিয়া লইলেন। ক্রমে ক্রমে রামগোপাল ডিরোজিওর শ্রেণীতে উন্নীত হইলেন। এখানে আসিয়া রামতনু লাহিড়ীর সহিত তাঁহার সন্মিলন ও আত্মীয়তা হইল। যে কতিপয় বালক ডিরোজিওর দিকে বিশেষরূপে আকৃষ্ট হইয়াছিল, রামগোপাল তাঁহাদের মধ্যে একজন। রামগোপালের আশ্চর্য্য ধীশক্তির পরিচয় পাইয়া ডিরোজিও