পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টম পরিচ্ছেদ।
১৭৯

গমন করিলেন; এবং হাজারি ও ব্রজনাথ মুখোপাধ্যায়ের প্রতি ব্রাহ্মধর্ম্মপ্রচারের ভার অর্পণ করিয়া গেলেন। রাজা মাসাবধি মুরশিদাবাদে অবস্থান করেন; এইকাল মধ্যে কৃষ্ণনগরে প্রায় চল্লিশ জন যুব ব্রাহ্মধর্ম্মে দীক্ষিত হইলেন; এবং জ্যৈষ্ঠ কি আষাঢ় মাসে দুই বুধবারে সকলে একত্রিত হইয়া পরব্রহ্মের উপাসনা করিলেন। রাজ শূদ্রজাতীয় হাজারি সমাজের উপাচার্য্যের কার্য্য সম্পাদন করিতেছেন শুনিয়া সাতিশয় বিরক্ত হইলেন এবং বাটী প্রত্যাগত হইয়া ব্রাহ্মদিগকে রাজবাটীতে সমাজ করিতে নিষেধ করিলেন। ব্রাহ্মগণ আমিনবাজারে একটী ক্ষুদ্র বাটী ভাড়া করিয়া তন্মধ্যে সমাজ সংস্থাপন করিলেন; এবং আপাততঃ ব্রজনাথ মুখোপাধ্যায় উপাচার্য্যেয় কার্য্য সম্পাদন করিতে লাগিলেন। অল্পদিন মধ্যেই দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন বেদবেত্ত ব্রাহ্মণ উপাচার্য্য প্রেরণ করিলেন।

 “ব্রাহ্মগণের শ্রেণী যেমন বর্দ্ধিত হইতে লাগিল, নগরমধ্যে এ বিষয়ের আন্দোলন তেমনি বাড়িয়া উঠিল। তাঁহারা বারনগরনিবাসী শ্রীযুক্ত বামনদাস মুখোপাধ্যায়কে সহায় করিয়া গোঁয়াড়িতে এক ধর্ম্মসভা প্রতিষ্ঠিত করিলেন; এবং ব্রাহ্মদিগের অনিষ্টসাধনে প্রতিজ্ঞারূঢ় হইলেন। কিন্তু মহারাজ ব্রাহ্মগণের স্বপক্ষ থাকাতে ব্রাহ্মধর্ম্মের উন্নতি ব্যতীত অবনতি হইল না। কিছুদিন পরে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আনুকূল্যে ও ব্রাহ্মগণের প্রযত্নে ১৭৬৯ শকে (১৮৪৭ খৃঃ অব্দে) বর্ত্তমান সমাজ-মন্দির নির্ম্মিত হইল। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গৃহ নির্ম্মাণার্থ এক সহস্র টাকা দান করেন।”

 পাঠকগণ দেখিতেছেন কলিকাতার অনুকরণে কৃষ্ণনগরে যে কেবল ব্রাহ্মধর্ম্মের অন্দোলন উঠিয়াছিল তাহা নহে, ধর্ম্মসভাও স্থাপিত হইয়াছিল; এবং প্রধান প্রধান ধনিগণ তাহার সারথি-স্বরূপ হইয়া নব্যদলের শাসনে বদ্ধ-পরিকর হইয়াছিলেন। মহারাজ শ্রীশচন্দ্র এই উভয়দলের মধ্যে দণ্ডায়মান; সমগ্র হিন্দুসমাজ এবং নবদ্বীপের পণ্ডিতমণ্ডলী তাহার পশ্চাতে, সুতরাং তিনি পুর্ণমাত্রায় নবোত্থিত বেদান্তধর্ম্মের মুখপাত্র হইতে পারিলেন না; কিন্তু উৎসাহদান, অনুরাগ, আদর, শ্রদ্ধা প্রভৃতির দ্বারা যতদূর হয় করিতে লাগিলেন। কেবল তাহা নহে, তিনি নবদ্বীপ হইতে বড় বড় পণ্ডিতদিগকে আনাইয়া তাহাদের সহিত বিচার উপস্থিত করিলেন—“কেন আপনারা বেদ-বিহিত বেদান্ত ধর্ম্মের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করিবেন না?” ফল কি হইল তাহা উক্ত গ্রন্থকার সংক্ষেপে এইরূপ বর্ণন করিয়াছেন,—