পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১২
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

নামক একজন প্রচারককে সমাজের আচার্যের কার্য্য করিবার জন্য প্রেরণ করেন। এরূপ শুনিতে পাওয়া যায় যে একজন বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ না পাঠাইয়া হাজারিলালকে প্রেরণ করাতে রাজা দুঃখিত হইয়া রাজবাটী হইতে ব্রাহ্ম সমাজকে স্থানান্তরিত করেন।

 ইহার কিঞ্চিৎপরে কলিকাতার অনুকরণে কৃষ্ণনগরে মিশনারিদিগের বিরুদ্ধে আন্দোলন উপস্থিত হয়। সেই সময়ে শ্রীশচন্দ্র নিজভবনে একটা অবৈতনিক ইংরাজী বিদ্যালয় স্থাপন করিয়া বালকদিগকে শিক্ষা দিতে আরম্ভ করেন।

 শ্রীশচন্দ্রের জীবনের অবসানকাল যেরূপ হইল তাহা অতীব শোচনীয়। ক্ষিতীশবংশাবলী-চরিত-লেখক তাহা এইরূপে বর্ণন করিয়াছেন। “রাজা বাল্যাবস্থা হইতে পৈঁত্রিশ বর্ষ বয়ঃক্রম পর্য্যন্ত, নিজের ও স্বদেশের হিত বিধান ও মঙ্গলসাধনে সতত রত ছিলেন। তাহার পর কলিকাতাবাসী কতিপয় মধুরভাষী ধনশালী ব্যক্তির সুধাচ্ছাদিত বিষপূরিত সংসর্গে তাঁহার আন্তরিক ও বাহ্যিক ভাবের বিস্তর বিপর্য্যয় হইতে লাগিল। তাঁহার বিষয় কার্য্যে মনোনিবেশ করা অতি ক্লেশকর জ্ঞান হইতে লাগিল; এবং সুহৃদ্বর্গের সুহৃদ্বাক্য কর্ণকুহরে কণ্টকবৎ বোধ হইয়া উঠিল। আহার, বিহার, শয়ন, সকলই নিয়ম-বহির্ভূত হইতে আরম্ভ হইল; দিবানিশি কেবল মদিরাপানে ও গীতবাদ্যের আমোদে কালাতিপাত করিতে লাগিলেন। দুই বৎসর মধ্যে তাঁহার মনোবৃত্তি নিস্তেজ হইয়া উঠিল এবং শরীর অবসন্ন হইয়া আসিল। অবশেষে ১২৬৩ বাং (ইংরাজী ১৮৫৭) অব্দের অগ্রহায়ণ মাসের একবিংশ দিবসে ৩৮ বৎসর বয়সে কালগ্রাসে পতিত হইলেন।”

 শ্রীশচন্দ্র লোকান্তরিত হইলে রাজা সতীশ চন্দ্র তাঁহার পদে প্রতিষ্ঠিত হইলেন। তখন তাঁহার বয়ঃক্রম বিংশতি বৎসর। এই রাজার সময়ে বর্ণনীয় বিষয় অধিক কিছুই নাই। ইনি বিষয়াধিকার প্রাপ্ত হইয়াই বিষয় কার্য্যে অবহেলা পূর্ব্বক কেবল কুসঙ্গীদের সঙ্গে নানাদেশ ভ্রমণে কালযাপন করিতে লাগিলেন। গিরীশ চন্দ্রের ন্যায় আয়ব্যায়ের প্রতি ইঁহারও দৃষ্টি ছিল না।

 ইনি ১৮৭০ খ্রীষ্টাব্দে ২৫ অক্টোবর দিবসে গুরুতর সুরাপান নিবন্ধন উৎকট পীড়াগ্রস্ত হইয়া মশুরি পাহাড়ে গতাসু হন।

 সতীশ চন্দ্র বিলাতী সভ্যতা ও বিলাতী রীতি নীতির অতিশয় পক্ষপাতী ছিলেন; এবং মধ্যে মধ্যে এদেশীয় ও ইংরাজ ভদ্রলোকদিগকে রাজবাটীতে