পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
৩৭

সেই বেন বাহাদুর বলিয়া গণ্য হইত, এইটা মুসলমান অধিকারের সর্বপ্রধান কলঙ্ক। ইহাতে জাতীয় নীতিকে একেবারে দুষিত করিয়া ফেলিয়াছিল। এই কারণে দেখিতে পাই মুসলমান অধিকার কালে যে সকল সংস্কৃত কাব্য রচিত হইয়াছে তাহার রুচি বিকৃত। অধিক কি, এই অধিকার কালে যে সকল তন্দ্র শাস্ত্র রচিত হইয়াছে, তাহাতে ও ইন্দ্রিয়াসক্তি ধৰ্ম্মের নাম ধারণ করিয়া দেখা দিয়াছে। এই কালমধ্যে অভূদিত অধিকাংশ ধৰ্ম্ম সম্প্রদায় ইন্দ্রিয়াসক্তির পূতিগন্ধে আপ্লুত।

 মুসলসান অধিকারের তৃতীয় অনিষ্ট ফল তোষামোদজীবিতা, আত্মগোপন ও প্রবঞ্চনাপরতা। দেশীয় ধনিগণ তোষামোদ, আত্মগোপন ও প্রবঞ্চনা দ্বারা নবাবদিগের অত্যাচার হইতে বাচিবার চেষ্টা করিতেন। র্তাহাদের দষ্টান্তের অনুসরণ করিয়া, তাহাদের অত্যাচার হইতে রক্ষা পাইবার আশয়ে অপর সকলেও তোষামোদ ও প্রবঞ্চনার আশ্রয় লইত। এইরূপে পরাধীনতাবশতঃ হিন্দুদিগের প্রাচীন সত্যনিষ্ঠা একেবারে চলিয়া গিয়াছিল বলিলে অত্যুক্তি হয় না। পথে ঘাটে, হাটে বাজারে, লোকে মিথ্যা কহিতে ও প্রবঞ্চনা করিতে লজ্জা পাইত না। তৎপরে যাহা কিছু অবশিষ্ট ছিল ইংরাজদিগের রাজস্ব আদায়ের প্রণালী, আইন ও আদালত স্থাপিত হইয়া তাহা ও অন্তৰ্হিত হইল। লোকে দেখিল সত্য নিদ্ধারণ ইংরাজের আইন বা ’ আদালতের লক্ষ্য নহে, সত্য প্রমাণিত হইল কি না তাহা দেখাই উদ্দেশু। সুতরাং লোকে জানিল যে, যে যত মিথ্য সাক্ষ্য সংগ্ৰহ করিতে পারিবে তাহারই জয়াশা তত অধিক। এইরূপে ইংরাজ-প্রতিষ্ঠিত আদালতগুলি মিথ্যা সাক্ষ্য প্রবঞ্চনাদির প্রধান স্থান হইয়া দাড়াইল লোকে জাল জুয়াচুরি দ্বারা কৃতকাৰ্য হইয়া স্পৰ্দ্ধা, করিতে আরম্ভ করিল। উৎকোচাদি দ্বারা ধনলাভ করিয়া সমাজ মধ্যে গৌরব লাভ করিতে লাগিল। দেশের এরূপ ছৰ্দশা না ঘটলে মেকলে বাঙ্গালিজাতির প্রতি স্বেরূপ কটুক্তি বর্ষণ করিয়াছেন, তাহা করিবার স্বৰোগ পাইতেন না। দেশের সাধারণ নীতির এই দুৰ্গতি হওয়াতে সৰ্ব্বত্রই লোকের প্রতিদিনের আলাপ আচরণ, তদনুরূপ হইয়া গিয়াছিল। কৃষ্ণনগরও সেই দূষিত বায়ুকে অতিক্ৰম করিতে সমর্থ হয় নাই।

 পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি খাজা ঈশ্বরচন্দ্র ১৮০২ খ্ৰীষ্টাব্দে লোকান্তরিত হন, এবং রাজা গিরীশ চন্দ্র রাজপদে প্রতিষ্ঠিত হন। রামতনু লাহিড়ী মহাশয় গিরীশচন্দ্রের অধিকার কালেই জন্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন। এই সময়ে কৃষ্ণনগরের