পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
৬১

দিয়াছিলেন। তাঁহার নাম গৌরীকান্ত ভট্টাচার্য্য। ইনিও জজ সাহেবের দেওয়ানীপদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। অনেক লোক ইহারও অনুগত ছিল। ইনি রামমোহন রায়ের মত খণ্ডনের উদ্দেশে “জ্ঞানাঞ্জন” নামে একখানি গ্রন্থ রচনা করেন, সেই গ্রন্থ ১৮৩৮ সালে কলিকাতাতে সংশোধিত আকারে মুদ্রিত হয়।

 ইহা সহজেই অনুমিত হইতে পারে যে, এই সকল আলোচনা ও গ্রন্থ-প্রচার দ্বারা দেশ মধ্যে সর্ব্বত্রই আন্দোলন স্রোত প্রবাহিত হইয়াছিল। সুতরাং তাঁহার কলিকাতা আগমনের পূর্ব্বেই তাঁহার প্রবর্ত্তিত আন্দোলন-তরঙ্গ এখানে পৌঁছিয়াছিল। তিনি কলিকাতাতে পদার্পণ করিবামাত্রই অগ্রসর, উদার, চিন্তাশীল, ও সংস্কার-প্রয়াসী কতিপর ব্যক্তি তাঁহার সহিত সম্মিলিত হইলেন। এতদ্ভিন্ন কতকগুলি বিষয়ী লোক তাঁহাকে পদস্থ ও ক্ষমতাশালী জানিয়া তাহার দ্বারা স্বীয় স্বীয় স্বার্থসিদ্ধি করিবার মানসে তাঁহাকে আশ্রয় করিলেন। তিনি এই সকলকে লইয়া ১৮১৫ সালে “আত্মীয়-সভা” নামে একটী সভা স্থাপন করিলেন। তাহাতে বেদান্তধর্ম্মের ব্যাখ্যা ও বিচার হইত। এই শাস্ত্রীয় বিচারে সহরের অনেক বড় বড় লোক মধ্যে মধ্যে উপস্থিত থাকিতেন।

 এ সম্বন্ধে একদিনের ঘটনা বিশেষ উল্লেখ যোগ্য। ১৮১৯ খ্রীষ্টাব্দে সুব্রহ্মণ্য শাস্ত্রী নামক একজন মান্দ্রাজ প্রদেশীয় পণ্ডিত কলিকাতাতে আগমন করেন, এবং দম্ভ করিয়া বলেন যে বঙ্গদেশে বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ নাই, এজন্য রামমোহন রায় বেদ বেদান্তের দোহাই দিয়া যাহা ইচ্ছা বলিতেছেন; তিনি বেদোক্ত প্রমাণ দ্বারা প্রতিপন্ন করিবেন যে প্রতিমা-পূজাই শ্রেষ্ঠ পূজা। এই সুব্রহ্মণ্য শাস্ত্রীর সহিত বিচার করিবার জন্য বিহারীলাল চৌবে নামক উত্তর পশ্চিমাঞ্চলবাসী একজন ব্রাহ্মণের ভবনে এক মহাসভার আয়োজন হয়। সুব্রহ্মণ্য শাস্ত্রীর সহিত রামমোহন রায়ের দলের বিচার হইবে এই বার্ত্তা সহরে প্রচার হইলে, সভাতে লোকে লোকfরণ্য হইয়া গেল। রামমোহন রায় সদলে, হিন্দুসমাজপতি রাধাকান্ত দেব পণ্ডিতগণ সমভিব্যাহারে ও সুব্রহ্মণ্য শাস্ত্রী স্বীয় বন্ধুবান্ধব সহ, সভাস্থলে উপস্থিত হইলেন। বৈদিক-শাস্ত্র-জ্ঞানবিহীন দেশীয় ব্রাহ্মণগণ সুব্রহ্মণ্য শাস্ত্রীর সমক্ষে হাঁ করিতে পারিলেন না। কেবল রামমোহন রায়ের সহিত সমানে সমানে বাগ্‌যু্দ্ধ চলিল। তুমুল শাস্ত্রীয় বিচারের পর সুব্রহ্মণ্য শাস্ত্রী পরাভব স্বীকার করিলেন; নিরাকার ব্রহ্মোপাসনাকে শ্রেষ্ঠ উপাসনা