পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যন্ত্রবদ্ধ শিক্ষাপ্রণালী ף צ পরীক্ষা, মাসাস্তে পরীক্ষা, বৎসরান্তে পরীক্ষা এবং চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং এই পরীক্ষা পরম্পরায় যে বিদ্যার বিশুদ্ধি বা শ্বামিকা নিৰ্দ্ধারিত হয়, তাহার নগদ মূল্য প্রতি মাসে চারি যুদ্র, এবং মাসের পোনেরই তারিখে বিদ্যালয়ের আপিসে জমা দিতে না পারিলে অতিরিক্ত দেয় জরিমান চারি আনা । বিদ্যাদানের এই যন্ত্রের মধ্যে নানাবিধ মহার্ঘ সামগ্ৰী আছে—দারোয়ান, চাপরাসী, সেক্রেটারি, দপ্তরী, অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, বেঞ্চি, টেবেল, লাইব্রেরি, হষ্টেল, ডিপ্লোমা, উপাধি, জরিমানা, রশিদ, ডাকটিকিট এবং অনেক চামড়া-বাধা খাতা—কিন্তু কেবল হৃদয় নাই। শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে কোনরূপ নুড়িীর টান নাই, কোনরূপ প্রীতিসম্পর্ক নাই। শিক্ষক ছাত্রের নাম জানেন না, মুখ চেনেন না ; ঘণ্টা বাজিলে আপন কৰ্ত্তব্য সারিয়া মাসাস্তে বেতন গ্রহণ করেন ; চুক্তিমতে আঠারর জায়গায় উনিশ ঘণ্টা কোন সপ্তাহে কাজ করিতে বলিলে কপালে চোখ তোলেন, আর অধ্যক্ষ বসিয়া বসিয়া দারিদ্র্যাপরাধী ছাত্র, বেতুন দিতে দেরি করিলে, তাহার জলখাবারের পয়স হইতে জরিমানা করেন ও কেরানীরা মুখ ভেঙচায়। এ পর্য্যন্তও সহ্য হয় ; কিন্তু ইহার ভিতরে একটা মস্ত ফাকি আছে, সেট প্রায় অসহ্য । ছাত্রের দিনের পর দিন পলিটিক্যাল ইকনমিশাস্থে লেকচার শুনিতেছে, কিন্তু পলিটিক্যাল ইকনমির সমুদয় সিদ্ধান্ত যদি মিথ্যা হয়, তাহাতে তাহাদের কিছুমাত্র ক্ষোভের হেতু নাই। ঘন্টার পর ঘণ্টা ধরিয়া লেবরেটরিতে দাড়াইয় তাহার কষ্টিক লোশনমধ্যে রূপার আবিষ্কার করিতেছে, কিন্তু রূপ। না থাকিয়া যদি সীসা থাকিত, তাহাতে তাহাদের কিছুমাত্র ক্ষতিবৃদ্ধি হইত না ; পৃথিবীর অভ্যন্তরে চুম্বক আছে কি না, এই লইয়। তাহারা অনেক বিচার-বিতর্ক মুখস্থ করিতেছে ; কিন্তু ভূকেন্দ্রে চুম্বক না থাকিয় একটা ভল্লুক থাকিলেও তাহারা কিছুমাত্র বিস্মিত হইত না । তাহারা চায় কেবল একখানা ডিপ্লোমা যাহার বলে ভবিষ্যতে মুনসেফ বা কেরানিত্ব ঘটবে ; যেখানে চুম্বক বা ভল্লুক, উভয়েরই সমান মর্য্যাদা ; নিতান্তই দায়ে পড়িয়া তাহারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিহিত পলিটিক্যাল ইকনমির লেকচার শোনার অত্যাচার সহ করিতেছে । অথচ এই শূন্যগর্ভ ফঙ্কিক এবং হৃদয়হীন দোকানদারি আশ্রয় করিয়া আমাদের শিক্ষাযন্ত্র বিকট শব্দ করিয়া অহরহ ঘূর্ণিত হইতেছে। এই আধুনিক শিক্ষাপ্রণালীর পাশ্বে দেশের পুরাতন শিক্ষাপ্রণালীর আলোচনা করা যাইতে পারে। চতুষ্পাঠাতে যে সকল বিষয় শিক্ষা দেওয়া হয়, তাহার সহিত আধুনিক বিদ্যামন্দিরে দত্ত শিক্ষার বিষয়ের তুলনা করা আবশ্বক নাই। শিক্ষার বিষয় লইয়৷ এখানে আলোচনা হইতেছে না, শিক্ষার প্রণালী লইয়া আলোচনা । টোলের প্রণালীর মুখ্য লক্ষণ এই যে, ইহার ভিত্তিতে ফাকি নাই। কেন না এই বিদ্যা গোড়াতেই অর্থকরী বিদ্যা নহে। র্যাহারা এই বিদ্যালাভে উৎসুক, তাহাদের অর্থলাভের প্রলোভন নাই। টোলের বিদ্যায় হাকিমি বা দারোগাগিরি বা কেরানিগিরি জুটিবার সম্ভাবনা নাই। কালেজে যে কেমিস্ত্রী পড়ে, আদালতের নাজির হইবার তাহার অধিকার জন্মে ; কিন্তু মুগ্ধবোধ বা অমরকোষ সটীক কণ্ঠস্থ থাকিলেও পেয়াদার চাপরাস পাইবারও অধিকার জন্মে না। টুলো ছাত্রের যে অর্থাসক্তি নাই, এমন নহে ; তাহারও জীবিকার প্রয়োজন আছে, কিন্তু ভবিষ্যতে টােল খোলা ভিন্ন তাহার অন্য چس-rt: